পুলিশের এসআই স্বামীর বদ লালসার রোষানলে বিষ পানে আত্মহত্যা স্ত্রীর

মোস্তাফিজুর রহমান।।

বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু সংসার করা হলো না খাদিজার। লম্পট এসআই স্বামীর বদ লালসার রোষানলে সুখের স্বপ্ন নিমিষেই যেন হারিয়ে গেছে অজানা কোন এক ভুবনে। গত (২১ মার্চ মঙ্গলবার) কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরায় স্বামী এসআই রবিউল হোসাইন রাকিবের বদ লালসার রোষানলে বিষ পানে জীবন দিলেন তার প্রথম স্ত্রী দেবিদ্বার সরকারি কলেজের এইচ এস সি পরীক্ষার্থী খাদিজা আক্তার (১৮)। এর আগে গত (১৮ মার্চ শনিবার) সন্ধ্যায় স্বামী রবিউলের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলেন, স্বামীর অকথ্য গালাগালি এবং তালাকের হুমকি দেয়ায় রাগে ক্ষোভে বিষ পান করেন খাদিজা।

পরিবারের লোকজন তাকে প্রথমে দেবিদ্বার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ওয়াস করেন। পরে অবস্থা অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল নিয়ে যায়। সেখানে গত (২১মার্চ মঙ্গলবার) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সরেজমিনে গেলে জানা যায়, বাঙ্গরা পূর্বধইর গ্রামের মো.শরীফ আহমেদ লাকদন এর একমাত্র মেয়ে খাদিজা আক্তারের বিয়ে হয় পাশের গ্রাম জামালপুরের জয়নাল হোসেনের ছেলে এসআই রবিউল হোসাইন রাকিবের সাথে। গত ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে ১৬ তারিখ পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এসময় খাদিজার বয়স (১৭) হওয়ায় এবং রবিউলের চাকরির পি.এস.আই পিরিয়ড থাকায় বিয়ের কাবিন হয় নাই। দুই গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং দুই পরিবারের স্বাক্ষী ও উপস্থিতিতে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়।

বিয়ের পরে স্বামী রবিউল স্ত্রী খাদিজাকে নিয়ে কয়েকবার নিজের বাড়ি,আত্মীয় স্বজনের বাড়ি, এমনকি কক্সবাজার সহ ঘুরে আসেন। ঘুরা শেষে পরে অনুষ্ঠান করে তুলে আনবে বলে স্ত্রী খাদিজাকে তার বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। এরি মধ্যে জামাই রবিউল তার শ্বশুর থেকে একটি মোটরসাইকেল এবং ঘরের জন্য ফার্নিচার চেয়ে নেয়।
রবিউল হোসাইন রাকিব বর্তমানে সি এম পি চট্টগ্রাম সদরঘাট থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত আছেন। যার বিপি নং ৯২২১২৩৮০৬৮ সেখানে তিনি প্রতারণা করে তার এক স্টাফ কনস্টেবল ফারহানা তিশা নামের এক মেয়েকে গত ৩০/০৮/২০২২ তারিখে বিয়ে করেন। যা প্রথম স্ত্রী গত ২৯/১১/২০২২ তারিখে তাদের বিয়ের কাবিন দেখার পরে নিশ্চিত হয়। এর পর থেকেই দু’জনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। রবিউল প্রথম স্ত্রী খাদিজাকে যত টাকা লাগে ততো টাকা দিয়ে তালাক দিয়ে দেবে বলে হুমকি ধমকি প্রদান করে আসছে।

এবিষয়ে খাদিজার মা নার্গিস আক্তার বলেন, আমার সহজ সরল মেয়েটা রাকিব বিয়ে করে ২০২১ সালে। ১বছর পরে উঠিয়ে নেয়ার কথা ছিলো কিন্তু সে আমার মেয়েকে উঠিয়ে না নিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ফারহানা তিশা নামের এক কনস্টেবলকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই সে বিভিন্নভাবে আমাদের উপর পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। সে আমার মেয়েকে তালাক দিয়ে দেবে বলে প্রতিদিন হুমকি দিতো। সে বলে আমি আইনের লোক তুরা পারলে আমার ক্ষতি করিস।

আমার মেয়েকে সে প্রতিদিন গালাগালি এবং মানসিক টর্চার করতো। আমার মেয়ের আত্মহত্যার জন্য এই রাকিব্বায় দায়ি। আমি আমার মেয়ের বিচার চাই। আমি এই প্রতারক পুলিশের শাস্তি চাই খাদিজার বাবা শরীফ আহমেদ লাকদন বলেন, আমার ১টি ছেলে একটি মেয়ে। এই ছেলে-মেয়ের জন্য আজকে ২৩ বছর বিদেশ করছি। আমার মেয়ের সুখের জন্য বিয়ের ৫মাস পরে জামাইকে ২,৫০,০০০(দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল কিনে দিছি। ২লাখ টাকার ফার্নিচার দিয়েছি। তারপরেও আমার সহজ সরল আদরের মেয়েটা আজকে তার জন্য আত্মহত্যা করেছে। আমি এই প্রতারকে বিচার চাই।

খাদিজার ফুফু শিরিন আক্তার বলেন, আমার ভাতিজী এই রবিউল হোসাইন রাকিব্বার কারণে আত্মহত্যা করছে। সে আমার ভাতিজীকে পুলিশের ভয় দেখাইতো। সব সময় মানসিক টর্চারের উপর রাখতো। আমরা এর বিচার চাই।

গ্রামের সর্দার আবুল হাসেম বলেন,খাদিজা এবং রবিউল হোসাইন রাকিবের বিয়ে গত ২০২১ সালে পারিবারিক এবং সামাজিক ভাবে হয়েছে। বিয়ের সময় মেয়ের বয়স ১৭ হওয়ার এবং রবিউল হোসাইন রাকিবের চাকরির পি এস আই পিরিয়ড থাকায় তখন কাবিন হয় নাই। আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই রাকিব মেয়েটার সাথে প্রতারণা করে আরেকটা বিয়ে করে।

তখন খাদিজার পরিবার থেকে একটি চট্টগ্রাম সিএমপিতে এবং আরেকটি ঢাকা অতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক (ডিসিপ্লিন) বরাবর রাকিবের বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ করে। এরপর দুই পরিবারের মধ্যে সামাজিক ভাবে সমঝোতা হয়ছিলো। কিন্তু রাকিব সেটা রক্ষা করে নাই। এই আত্মহত্যার সাথে অবশ্যই রাকিব জড়িত। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাই।

বাঙ্গরা থানার অফিসার ইনচার্জ মো.রিয়াজ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এবিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন । আমরা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

আরো দেখুনঃ