প্রয়াত সাংবাদিক সবুজের বাড়িতে খোলা কাগজ পরিবার
দৈনিক খোলা কাগজের কুমিল্লা প্রতিনিধি প্রয়াত নাজমুল সবুজকে ২০২২ সালের সেরা জেলা প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে নীল সাগর মিডিয়া হাউজ। এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টস্থ ফরিজপুর এলাকায় বসবাসরত সবুজের পরিবারের হাতে সেরা জেলা প্রতিনিধির সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেয়া হয়।
শুক্রবার সকালে ক্রেস্ট প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সবুজের পিতা আনোয়ার হোসেন, মাতা নুরুন্নাহার বেগম, বোন ডা. কামরুন্নাহার সাথী এবং নাজমুন্নাহার বিথী।
খোলা কাগজের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট তুলে দেন পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. মনির হোসেন, বার্তা সম্পাদক সাজেদ রোমেল ও জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) মো. হেলাল উদ্দিন। পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক প্রকৌশলী আহসান হাবীব এর পক্ষে এই সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
নাজমুল সবুজ বিগত ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর থেকে তার হৃদপিন্ড ও ফুসফুসে সমস্যা দেখা দেয়। গত বছরের ২২ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সবুজকে ভারতে নেয়া হয়। পরে ২৯ নভেম্বর দেশে ফিরে রাজধানীতে আত্মীয়র বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সবুজ ইহকালের মায়া ত্যাগ করেন।
১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনোয়ার হোসেন ও নুরুন্নাহার বেগমের সংসার আলোকিত করে জন্ম নেয় নাজমুল সবুজ। মেধাবী ও বিনয়ী সবুজ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দশম ব্যাচে লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় মানবকন্ঠ, বণিক বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০২২ সালে তিনি দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকায় কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি পদে যোগদান করেন।
বড্ড অভিমানী ছিলেন সবুজ৷ মাকে ঘিরেই তার যতো খুনসুটি। মাকে সোফায় বসিয়ে কোলে মাথা রেখে মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে তিনি ভালোবাসতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাঠ শেষ করেও দূরন্তপনা ছাড়েনি সবুজ। মায়ের হাতে রান্না করা খুব সাদামাটা আয়োজনে সবুজ আত্মতৃপ্তি খুঁজে পেতেন। গত বছরের ২২ নভেম্বর চিকিৎসার জন্য সবুজ বড় বোনের সঙ্গে ভারতে যান। মায়ের হাতের পছন্দের খাবারগুলো তৈরী করে ফ্রিজে তুলে রেখে দেয়ার আবদারও ছিল তার।
আনোয়ার হোসেন বলেন, সবুজ আমার একমাত্র পুত্র সন্তান। খুব সাদামাটা জীবনে তিনি সন্তানদের সততা, নীতি ও আদর্শে থেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। মৃত্যুর ছয় মাস আগে থেকে সবুজ তার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করতো। পুত্রের জীবন প্রদীপ যে তখন থেকে নিভুনিভু করছিলো সেটা তিনি কল্পনাও করেননি। পুত্র সন্তান বড় হয়ে গেলে সাধারণত পিতার সঙ্গে অতোটা মাখামাখি করে না। তবে মৃত্যুর আগে সবুজ ছিল ব্যতিক্রম।
নুরুন্নাহার বেগম বলেন, মৃত্যুর কয়েকদিন আগে সবুজ অভিমান করে বলেছিল, ‘আমি মরলে তখন বুঝবে।’ সন্তানের অভিমানের সুরে মৃত্যুর পরোয়ানা তখনও তিনি টের পাননি। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিল সবুজ। সবুজের হৃদপিন্ড করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এটি সবুজ ব্যতীত পরিবারের সকলে জানতো। পুত্রবধূ ঘরে আনার স্বপ্ন ছিলো নুরুন্নাহার বেগমের। তবে সবুজ তাতে সম্মতি দেয়নি। শিশুকাল থেকে বাতজ্বরে আক্রান্ত ছিলেন সবুজ। খিচুনি হতো। অল্প বয়সে মৃত্যু হলে স্ত্রীর কী হবে- এমন ভাবনার কথা মাকে জানিয়েছিলেন সবুজ।
সবুজের বড়বোন চিকিৎসক কামরুন্নাহার সাথী বলেন, ভারতে চিকিৎসাকালে চিকিৎসক দ্রুত সময়ে সবুজের শরীরে প্রেসমেকার স্থাপনের তাগিদ দিয়েছিলেন। প্রস্তুতি নিতেই সবুজকে নিয়ে স্বল্প সময়ে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরেছিলেন।