বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ব্যতিক্রমী আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠল সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা

নড়াইল প্রতিনিধি।।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ব্যতিক্রমী আনন্দ-উৎসবের মধ্যদিয়ে সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম শিশুদের নিয়ে দিনটি অতিবাহিত করলো নড়াইলের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন। সারাদিন খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, কেক কাটা, র‌্যালি, আলোচনা সভা সহ নানা আয়োজন ছিলো তাদের। দুপুরে ছিলো শিশুদের জন্য উন্নতমানের ভোজের আয়োজন। ভিন্নরকম এই আনন্দ-উৎসবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

১৪ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) নড়াইলের হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি ডিসি পার্কে সংগঠনটির ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ^ ভালবাসা দিবস উপলক্ষে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে উপস্থিত ছিলো শতাধিক ছিন্নমূল, এতিম ও বেদে সম্প্রদায়ের শিশু। সারাদিন খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতার শেষ পর্যায়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধান অতিথি নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিশেষ অতিথি নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। অতিথিবৃন্দ শিশুদের নিয়ে কেক কাটেন শুভেচ্ছা বক্তবে তাঁদের অনুভূতি ব্যক্তকালে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন। পরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ। এর ভোজ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক নিজেই শিশুদের প্লেটে খাবার তুলে দেন। এমন একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে ভীষণ খুশি এসব সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম শিশুরা।

নড়াইল শহরের বিয়াম স্কুলের পাশে সুবিধাবঞ্চিত শিশু প্রিয়াংকা দাস পিকিং ও নন্দিতা দাস জানায়, আগে কখনো এ ধরণের আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠিনি। ট্রেন, নাগরদোলা, চরকা, নৌকাসহ বিভিন্ন রাইডে চড়তে পেরে খুব খুশি হয়েছি। এতিমখানার শিশু তারেক ও মাসুম বিল্লাহ জানায়, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের ভাইয়েরা আমাদের অনেক আনন্দ দিয়েছেন। দিনভর ঘোরাঘুরি করেছি। দুপুরে ভালো মানের খাবার খেয়েছি। জেলা প্রশাসক স্যার, পৌর মেয়রসহ অনেকে নিজ হাতে আমাদেরকে খাবার তুলে দিয়েছেন। এছাড়া আমরা বিভিন্ন প্রকার খেলায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেয়েছি।

স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভিন্নরকম এই আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে সংগঠনের উপদেষ্টা মোঃ ফয়সাল মুস্তারী বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া তরুণদের সৃজনশীল এই উদ্যোগ সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়–ক এই আমাদের প্রত্যাশা। ভবিষ্যতেও তারা ভালো কাজ অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছি। নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন সবসময় ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের কাজ দেখে আমরা মুগ্ধ। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে শিশুদের নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন করায় তাদের ধন্যবাদ জানাই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন নামটি যেমন চমৎকার, তেমনি তাদের কার্মকান্ডও অনেক সৃজনশীল। তারা সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূল¯্রােতধারায় এগিয়ে নেয়ার জন্য অনেক কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-নড়াইল সদর থানার ওসি শওকত কবির, এনডিসি আসিফ উদ্দিন মিয়া, পৌর কাউন্সিলর শরফুল আলম লিটু, ইপি রানী অধিকারী, বিএম নজরুল ইসলাম, যুব মহিলা লীগের আহবায়ক নাসিমা রহমান পলি, ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মোঃ ফয়সাল মুস্তারী, সভাপতি মির্জা গালিব সতেজ, সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহ পরাণসহ অনেকে।

স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ বিজয়ী ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরুতে থেকেই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করছি। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাঁচ বছর যাবত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে এ ধরণের ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ‘সুখ স্বপ্নের সন্ধানে কাজ করব মোরা একই বন্ধনে’-এ ¯েøাগানে ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখতে চাই। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আনন্দ অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরু হয়।

সংগঠনের সদস্যরা জানান, পড়ালেখার টাকা জমিয়ে এবং পারিবারিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতা ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষা ও জীবনযাত্রা মানউন্নয়ন নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গত বছর ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ জয়লাভ করে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর বিকেলে সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান করেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা ও সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয়।

এছাড়া করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে সবজি বাজার, গরিব কৃষকের ধান কর্তন, চিকিৎসাসেবা, হাসপাতাল ও এতিমখানায় ইফতার বিতরণ, ঈদে ছিন্নমূল ও বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক উপহার দেয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। সংগঠনে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৪৫ জন। এদের বেশির ভাগই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।

আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।

আরো দেখুনঃ