বুড়িচং’র মোকাম ইউপি নির্বাচনে: দলীয় প্রার্থী ৪জন; নৌকার নমিনেটেড হবেন কে ?
শান্তনু হাসান খান (বিশেষ প্রতিনিধি)
কুমিল্লার বি-পাড়া ও বুড়িচং উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে মোকাম ইউনিয়নের বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুন্সি চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি পুনরায় প্রার্থিতা চাইবেন। তবে সাধারন মানুষদের মনোভাবটা বদলে গেছে। বিগত দিনে যত কাজ করেছেন তার সবটাই ছিলো স্বচ্ছতায় সরকারী রুটিন ওয়ার্ক। দৃশ্যমান যত উন্নয়ন- তার পুরোটাই দাবীদার মাননীয় সাংসদ। এবার পছন্দের তালিকায় রেখেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলী হায়দার আর গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহেব আলী এছাড়াও আছেন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আর আওয়ামীলীদের সদস্য মুজিবুর রহমান। অনেক গুলো পজেটিভ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বুড়িচং’র ৯টি ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিরবে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। তবে এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের জন্য দলের সিনিয়র নেতা ও নীতি নির্ধারকদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন নিরবে। তবে শেষ অব্দি কার ভাগ্যে নৌকার টিকেট জুটবে- সেটা সময়ের ব্যাপার।
উল্লেখ্য যে, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন মোকাম ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডের ভোটার মোঃ আলী হায়দার। তিনি বলেন, আমার অতীতের পলিটিকেল ক্যারিয়ার ও এলাকার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করলে আমি ইনশাল্লাহ দল থেকে নমিনেটেড হতে পারবো এবার।
৫৪ বছরের আলী হায়দার বেড়ে উঠেছেন তার গ্রামের বাড়িতে। পড়াশোনা করেছেন তার স্থানীয় স্কুলে। পরে নিমসার জুনাব আলী ডিগ্রি কলেজে ইন্টার পাশ করেন। ১৯৯০ সালে ছাত্র লীগের সভাপতির মধ্যদিয়ে তার রাজনৈতি কর্মকান্ড শুরু। পরবর্তী সময়ে তিনি যুবলীগের নেতৃত্ব প্রদান করেন। আর ঐ সময় প্রয়াত সংসদ আব্দুল মতিন খসরুর হাত ধরে তিনি আওমীলীগের রাজনীতি শুরু করেন। টানা ১৯ বছর যুবলীগের নেতৃত্ব শেষ করে নতুন কমিটিতে তিনি যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। অতিসম্প্রতি তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। আর এই ইউনিয়নের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুন্সি।
বুড়িচং ও বি-পাড়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন বর্তমান। আর এখানকার সাংসদ ছিলেন প্রয়াত আব্দুল মতিন খসরু এমপি। সাংসদের দিক নির্দেশনা ও পৃষ্টপোষকতায় যথেষ্ঠ উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে তার এলাকায়। এখানকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো উন্নয়নে যথেষ্ট দৃশ্যমান। সবকটি চেয়ারম্যান সরকার দলীয়। আগামী ইউপি নির্বাচনের বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুন্সি ছাড়াও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, মুজিবুর রহমান ও গত বারের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহেব আলী এবার নির্বাচনে নমিনেড হতে চান। কিন্তু জনগনের চাহিদা সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দারকে। বাকীদের নিয়ে এলাকার জনগনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। এদিকে বর্তমান নব-নির্বাচিত সাংসদ এডভোকেট আবুল হাসেম ও উপজেলার চেয়ারম্যানের দিক নির্দেশনায় আগামী দিনগুলোতে জননেত্রী শেখ হাসিনার আমার গ্রাম-আমার শহর প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে কাজ করার অভিমত প্রকাশ করেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী- আলী হায়দার।
এদিকে সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি ইতি মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেছেন। মার্চ থেকে শুরু করে জুন মাসের শেষ নাগাদ ধারাবাহিক ভাবে গত বারের মত ৫ ধাপে নির্বাচন শেষ করতে চান স্থানীয় মাঠ প্রশাসন। দেশে বর্তমানে ৪ হাজার ৫৭১ টি ইউনিয়ন পরিষদ বিদ্যমান। ২০১৬ সালে ২২ শে মার্চ শুরু হয়ে ৪ জুন পর্যন্ত কয়েক ধাপে নির্বাচন সমাপ্ত করে সরকার।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন পূর্বে পরবর্তী পরিষদের গ্রহণযোগ্যতা থাকে। আর সেই আলোকে কুমিল্লা ১৭ টি উপজেলার ৩১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই কুমিল্লার মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন সি.ই.সি। এর মধ্যে লাকসাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ, মনোহরগঞ্জের ১১ টি ইউনিয়ন, লালমাই উপজেলা ১১ টি , দেবিদ্বারে ১৫ টি, বি-পাড়া ও বুড়িচং এ ১৭টি ও মুরাদনগরের ২২ অন্যতম।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এবার যারা মনোনয়ন প্রত্যাশি সবাই আওয়ামী দলীয় নেতা কর্মী। দীর্ঘ দিন যাবৎ এ এলাকার রাজনীতিবীদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে –আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) সাবেক রেল মন্ত্রী এডভোকেট মুজিবুল হক। তাদের দিক নির্দেশনায় এবারের নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। তবে এখানকার বর্তমান এমপি এডভোকেট আবুল হাশেম কাকে রেখে কাকে দলীয় টিকেট দেবেন- তা নিয়ে ঝল্পনা কল্পনার শেষ নেই। ১৭ টি ইউনিয়নের সকল প্রার্থীরাই মনে করেন তারা এমপির পছন্দের মানুষ। এই পছন্দের প্রার্থীতা বাছাই করতে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের কাউন্সিল অধিবেশন কিংবা বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে দলীয় ভাবে নমিনেটেড করলে কোন বিদ্রোহী প্রার্থীর আগমন ঘটবে না। সবাই তার জন্য এক হয়ে কাজ করবেন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হায়দার বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবার তেমন কোন সুযোগ নেই। মাননীয় এমপি ও দক্ষিণ জেলার নীতি নির্ধারকগণ যে সিদ্ধান্ত দেবেন বা যাকে দল থেকে নমিনেটেড করবেন, আমরা তার জন্যই কাজ করে যাবো আগামী দিন গুলোতে। এবং নৌকার প্রার্থীকে বিজয় করতে নিশ্চিত করবো। পাশাপশি জননেত্রী শেখ হাসিনার এবারের প্রতিপাদ্য- “আমার গ্রাম-আমার শহর” বাস্তবায়িত করতে আমি ব্যক্তিগতভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আমি নির্বাচিত হলে ইনশাল্লাহ প্রতিটি ওয়ার্ড ভিত্তিক পারিবারিক আদালতগুলো নিসপত্তি করার জন্য ওয়ার্ড মেম্বার ও গ্রাম্য সর্দারকে সমন্বয় করে তা সমাধান করবো। যাতে, জনগন থানায় যেতে না হয়। এছাড়াও যুব সমাজের কর্মসংস্থানের চেষ্টা অব্যহত থাকবে। তিনি বলেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহা সড়কের পাশে ঐতিহ্যবাহি নিমসার কাঁচা বাজার। বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেকে মন্তব্য করেছেন। তবে আগামীতে এর সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা করার চেষ্ঠা করব। পরিশেষে আলী হায়দার বলেন, সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছি। আওয়ামী ঘরনার রাজনীতি করে আসছি। দলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কোন রাজনৈতিক বানিজ্য করি নাই। চাঁদা বাজি, টেন্ডার বাজি বা বালু মহল দখল করার কোন প্রীভিয়াস রেকর্ড নেই।
এদিকে ১৭ হাজার ভোটারদের মাঝে ৩০% নবীন এবং তরুণ ভোটাররা আগামীতে মোঃ আলী হায়দার কে চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয়ী করতে তার পিছনে একাট্টা।