মুরাদনগরে ২২টি ইউপি নির্বাচনে আ’লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কি করে বিদ্রোহী প্রার্থী বনে যান?

শান্তনু হাসান খান, মুরাদনগরে (বিশেষ প্রতিনিধি)।।

আওয়ামীলীগের বিদ্রোহ প্রার্থী আর বিনা ভোটে নির্বাচিত একশত চেয়ারম্যানসহ ৫৫৯ জন কিভাবে নির্বাচিত হয়ে যান? সিইসি নির্বাচনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছেন বলে দাবী করছেন।

তারপরেও আওয়ামীলীগের অনেক নিবেদিত-তৃণমূলের পোড়খাওয়া নেতাকর্মী ছিলেন এবার যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে ছিলেন। এক্ষেত্রে তারা প্রতিপক্ষের কাছে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ বলে আখ্যায়িত হয়ে আসছেন। এমন একজন বিদ্রোহী আছেন, ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এলাকায় থেকে দুর্দিনে আওয়ামীলীগের হাল ধরেছেন-ওই সমস্ত নেতাকর্মীরা আজ বিদ্রোহী।

অনেকে বলেন সিলেকশন বোর্ডের কাছে আমি হয়ত অতোটা মূল্যায়িত হইনি। কিন্তু এলাকার জনগণের কাছে আমি মূল্যায়িত হয়ে ছিলাম বলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।

আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কি করে হয়? যদি ওই প্রার্থী অন্য দলের হয়ে আঁতাত করে নির্বাচিত হয় তাহলেই তাকে বিদ্রোহী বলা যেতে পারে। এসব মনগড়া কথা নিয়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা তৃণমূলের কর্মীদেরকে অবজ্ঞা করছেন কিংবা অবমূল্যায়ন করছেন। এ প্রসঙ্গে গতবারের প্রার্থী শিমুল বিল্লাল এবারও নির্বাচনে থাকতে চাইছেন দলীয়ভাবে। এ মানুষটি মুরাদনগরের ২নং আকবপুর ইউনিয়নের একজন সিনিয়র নেতা। তিনি পরপর দু’বার নির্বাচনের মাঠে ছিলেন। তার ভাষায়, ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং করে আমাকে হটানো হয়েছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে মুরাদনগরের আওয়ামীলীগের দুটি বলয় কাজ করছে দীর্ঘদিন। উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার বনাম এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এর অনুসারীদের মাঝে। তবে জাহাঙ্গীর আলম সরকার এক সময় প্রচন্ড দাপটে ২২টি ইউনিয়নকে সামলাতে পেরেছেন। সে ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান। তবে সাহস নিয়ে কোন চেয়ারম্যান বা নেতা কর্মীরা ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের বিরুদ্ধে টু শব্দও করেন না। কেননা তাঁর দিকনির্দেশনায় এবং পৃষ্টপোষকতায় গোটা মুরাদনগর উপজেলা উন্নয়নের ছোঁয়া পুরোটাই দৃশ্যমান।

এদিকে সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউপি নির্বাচন করতে যাচ্ছে স্থানীয় মাঠ প্রশাসন। ব্যাপক সহিংসতা আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যদিয়ে দু’ধাপে নির্বাচন সমাপ্ত করেছে সিইসি। তৃতীয় ধাপে ৮৩৫টি ইউপি নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ৩৩৮ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার একক প্রার্থী হয়ে। চরমোনায়েমের ইসলামী ঐক্যজোটের হাত পাখায় ৬টি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

আর ৫০৪ জন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপি নির্বাচন হবে ২৩ ডিসেম্বর, গত ২দিন আগে ২৫ নভেম্বর মনোয়ন জমা দেয়া হয়েছে। এতে অনেক উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য ৫ থেকে ৮ জন পর্যন্ত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন ক্রয় করেছেন। অনেকেই বলেন নৌকার টিকেট যারা পেয়েছেন তারা অনেকেই ‘নমিনিয়েশন বাণিজ্যে’র মধ্যেই। বাছাই হবে ২৯ নভেম্বর, আপীল করা যাবে ৩০ নভেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা যাবে ৬ ডিসেম্বর।

আর সেই আলোকে এবার কুমিল্লার মুরাদনগরের ২২টি ইউপি নির্বাচনে তফসিল চলতি মাসের শেষ দিবসে। তফসিল ঘোষণার পরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা একটু নড়েচড়ে বসবেন বলে আশা করা যায়। তবে আলোচিত ২নং আকবপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বাবুল আহমেদ মোল­া-এবারও নৌকার প্রতীক চাইছেন। বিগত দিনে যা করেছেন, তা পুরোটাই ছিল সরকারি রুটিন ওয়ার্ক।

দৃশ্যমান কোন কিছুই দেখাতে পারেননি রবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। এই নিয়ে দুদকে মামলা করার চিন্তা করছেন কয়েকজন মেম্বার। পাশাপাশি তারই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান তিনিও নৌকার কান্ডারী হতে চান। তবে সবটাই নির্ভর করছে এলাকার এমপি আলহাজ্জ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন’র সুপারিশের উপর।

এদিকে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের পছন্দের তালিকায় গতবারের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এর সভাপতি শিমুল বিল্লাল, বাঙ্গরা বাজার যুবলীগের সদস্য ও কৃষকলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ ইকবাল হোসাইন ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও প্রবাসী যুবলীগের সদস্য মোঃ রাসেল মিয়া। এ ছাড়াও জিয়াউল করিম মাখন এবারের নির্বাচনে প্রার্থীতা চাইবেন।

শিমুল বিল্লাল আকবপুরের ৪নং ওয়ার্ডের ভোটার। বেড়ে উঠেছেন এ জনপদে। মাটি আর মানুষের সাথে সম্পৃক্ত ছোট বেলা থেকেই। পড়াশোনা করেছেন স্থানীয়ভাবে এবং পরে ঢাকা টিএন্ডটি স্কুলে। এরপর ঢাকা কলেজ। ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সদস্য পরে উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। তার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম রাব্বানী। তার বাবার নামে একটি ফাউন্ডেশন করেছেন। যার মাধ্যমে এলাকায় গরীব দু:খীদের সহায়তা করে নন্দিত হয়ে আছেন। পাশাপাশি করোনা কালীন সময়ে আর্থিক সহায়তাও করেছেন। ফলে সুষ্ঠু ভোটে তিনি এবার উঠে আসবেন বলে প্রত্যাশা করেন।

অপর প্রার্থী ৪৮ বছরের ইকবাল হোসাইন। আকবপুরের ৪নং ওয়ার্ডের ভোটার। ঢাকার ডেমরাতে লেখাপড়া করেছেন। পরবর্তী সময় পীরকাশিমপুর আরএম হাইস্কুলে এবং সবশেষে শ্রীকাইল কলেজ। ২০১২ থেকে ২০১৮ বাঙ্গরা বাজার যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। ছিলেন তিনি কৃষকলীগের যুগ্ম আহবায়ক। ২০১৬ তে একবার প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় মাননীয় এমপি’র প্রতি ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান।

তিনি বলেন, আমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ এলাকার কৃতিসন্তান এবং সমাজসেবক মাননীয় এমপি আলহাজ্জ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। হয়ত এবার আমাকে দলীয়ভাবে নমিনিয়েশন দিতে সাহায্য করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি নির্বাচনের মাঠকে গুছিয়ে রেখেছি। আর নির্বাচিত হলে এ ইউনিয়নকে অত্যাধুনিক ও ডিজিটাইলাইজড ইউনিয়ন হিসেবে জনগণকে উপহার দেয়ার চেষ্টা করবো।

অপর প্রার্থী ৩৮ বছরের রাসেল মিয়া, আকবপুরের ৯নং ওয়ার্ডের ভোটার। শামছুল আলম ডিগ্রি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। এক সময় ছাত্রলীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ছিলেন। পরে যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সক্রিয় সদস্য। মাঝখানে জীবন ও জীবিকার কারণে প্রবাসে চলে যান। সেখানেও আওয়ামী ঘরোনার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এবার তিনি নির্বাচনে মাঠে থাকতে চাইছেন। যদি এমপি’র সুপারিশ থাকে তাহলেই তিনি মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকতে চান।

তিনি বলেন, আমাদের মুরাদনগরে ব্যাপক এলাকায় ইতিমধ্যেই অনেক ব্রিজ-কালভার্ট, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা করেছি করেছেন। আর সবকিছুই হয়েছে আমার এমপি আলহাজ্জ ইউসুফ আবদুল­াহ হারুন এর দিক নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যেই। যদি আমি নির্বাচিত হতে পারি এ ধারাবাকিতা রক্ষা করার চেষ্টা করবো আগামী দিনগুলোতে। আমি কোনো প্রফেশনাল চেয়ারম্যান হয়ে – টিআর-কাবিখা’র পেছনে দৌড়াতে চাই না। জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

আয়েশা আক্তার/অননিউজ24

আরো দেখুনঃ