মোহাব্বত পাগলার দুঃস্বপ্ন থেকে পাওয়া
মানিক শিকদার।।
একদেশে বিশাল এক বন ছিল। সেই বনের রাজা ছিল সিংহ। হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক, কুমির, হরিণ, বানর, শিয়াল, চিল, শকুন, ফরিং সহ নানা প্রাণীর বসবাস এখানে। ঘটনাচক্রে বনের এক প্রাণী,( হাতি চিন্তা করলো বনের সমস্ত তথ্য রাজাকে জানানোর প্রয়োজন। রাজার কাছে প্রস্তাব করলো একটি সংবাদ মাধ্যম প্রতিষ্ঠার। রাজা ভাবল হ্যা হতে পারে, রাজ্যের কোথায় কি ঘটনা দুর্ঘটনা সেগুলো তো জানাই দরকার। রাজা হাতিকে একটি সংবাদ মাধ্যম তৈরির অনুমোদন দিলো।
Elephant TV নামে হাতি একটি টেলিভিশন বানানো। সেই টেলিভিশনে সাংবাদিকতার চাকরি পেল রাজ্যের ময়না, টিয়া, বাবুই পাখিরা। তারা উড়ে উড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে খবর সংগ্রহ করতো, টিভিতে খবর প্রকাশ করতো। কে কোথায় কি করছে? কেউ অবৈধভাবে শিকার করছে কিনা? কেউ জবর দখল করছে কিনা? এসব তথ্য পেয়ে রাজা তার রাজ্যের বিচার ব্যবস্থা সফল ভাবে পরিচালনা করতে পারছিলেন। রাজ্যের সাধারণ পশুপাখিরাও খুশি।
কিন্তু সবাই কি আর খুশি? না! কারণ এই রাজ্যে ওই এলিফ্যান্ট টিভির কারণে অনেকেই ধরা পড়ছিল। এই যেমন ভাল্লুক সেদিন তার ঘরে খাবার থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে আরেকজনের খাবার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই নিউজ প্রচার করার কারণে রাজা ভাল্লুক কে জরিমানা করলেন। এবার ভাল্লুক ভাবল হাতির বিরুদ্ধে কিছু একটা করতে হবে। সে হাতির পিছনে লোক লাগিয়ে দেখলো হাতিও অনেক কিছু অবৈধভাবে করছে। কিন্তু তাকে কেউ কিছু বলছে না কারণ তার মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন নিউজ হয় না। ভাল্লুক এবার ভাবলো, না হাতিকে ধরতে হলে অবশ্যই আমার একটা পশুমাধ্যম চ্যানেল করতেই হবে।
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ভাল্লুক একটি টেলিভিশনের অনুমোদন পেয়ে গেল। এবার ভাল্লুকও তার চ্যানেলে রাজ্যের সব খবর প্রচার করে। একদিন হাতি তার জঙ্গল ছেড়ে অন্য জঙ্গলে গিয়ে কলা গাছ সাবাড় করছিল এটা ভাল্লুকের টেলিভিশনে লাইভ প্রচার করে দিল। এ নিয়ে কয়েকদিন পাল্টাপাল্টি নিউজ হলো। টকশো হলো। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল দুপক্ষই চুপ। হাতির টিভিতে ভাল্লুক নিয়ে নিউজ হয় না আবার ভাল্লুকের টিভিতেও হাতিকে নিয়ে কোন নিউজ হচ্ছে না। এখন বাঘ, ঘোড়া, হরিণ, বানর এদের বিরুদ্ধেই বেশি খবর হয়। কদিন বাদে ঘোড়াও চ্যানেলের মালিক হয়ে গেল। গাধা ও একটি টেলিভিশনের লাইসেন্স পেয়ে গেছে যদিও সেটা এখনো চালু করতে পারেনি। এরকম করে অনেকেই পশুমাধ্যমের মালিক হয়ে গেছে। যারা মালিক হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আর কোন সংবাদ নাই। এদিকে সব টিভির সংবাদ কেবল বাঘকে ঘিরে। বাঘ কোথায় ঘুমালো? তা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হচ্ছে! বাঘ কেন তার ঘরের চারপাশে নোংরা করে রেখেছে তা নিয়েও লাইভ হচ্ছে। তার শিকার অবৈধ! সে ঘরে বউ থাকতে অন্যের বউকে নিয়ে নদীর পাড়ে ঘুরতে গিয়েছিল সেটা নিয়েও সংবাদ! এসব সংবাদ মহারাজা দেখেন আর বাঘের উপর রুষ্ট হন একটার পর একটা বিচার করেন।
একদিন বাঘ তো রেগেমেগে আগুন। সে বনের রাজা সিংহকে গিয়ে বলল -মহারাজ আমি এই রাজ্যের একজন সম্মানিত পশু। অথচ আমার বিরুদ্ধে ওইসব পশুমাধ্যমে আলতু ফালতু নিউজ হয়! আর সেই নিউজের সূত্র ধরে আপনি আমার বিচার সালিশ করেন। এটা আর মেনে নেওয়া যাবে না। এর বিহিত করতেই হবে আপনাকে।
সিংহ বলল- তুমি অন্যায় করছো, শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।
-অন্যায়! কে অন্যায় করছে না মহারাজ? আপনার চোখের সামনে হাতি শেয়ার বাজার লুট করে নিয়ে গেল! আপনার চোখের সামনে ভাল্লুক অন্যের শিকার দখল করে অবৈধভাবে কুক্ষিগত করেছে। ঘোড়া হাসপাতাল বানানোর নামে এ রাজ্যের সম্পদ নষ্ট করল! সেদিন কুমির তুচ্ছ কারণে সাতটা বানর মেরে দিল! কই তাদের তো বিচার করছেন না।
-বল কি? এসবতো কোন নিউজে দেখলাম না! ঘটনা সত্য হলে নিশ্চয়ই তাদের বিচার হবে।
-মহারাজ আমি অতশত বুঝিনা আপনি আমাকে পশুমাধ্যমের অনুমোদন দেন। আমি অন্তত দশটা টেলিভিশনের মালিক হতে চাই, পাঁচটা পত্রিকার মালিক হতে চাই, অনলাইন পোর্টালের মালিক হতে চাই। এ রাজ্যের যত সাংবাদিক টিয়া, ময়না, শালিক, বক এমনকি অতিথি পাখি সম্বাদিক যারা আছে তাদের সবাইকে আমার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে নিবো। তখন দেখবেন আমার মত মহৎ ব্যক্তি আপনার রাজ্যে আর কেউ নেই।
মহারাজ সিংহ বাঘকে একটা সুযোগ দিল, সেই সুযোগে বাঘ কয়েকটা পত্রিকা, কয়েকটা টেলিভিশন আর পোর্টাল তৈরি করে ফেলল। অন্যসব চ্যানেলের তোতা পাখিরা সব হুমড়ি খেয়ে পড়ল বাঘ টিভিতে। আশ্চর্যভাবে সবাই দেখলো বাঘ ও বাঘের ছেলেপুলেরা এখন সমাজের সবচেয়ে মহৎ ব্যক্তিত্ব! দানশীল দানবে পরিণত হয়েছে। যারা বাঘ ও বাঘের ছেলেপুলেদের কুৎসা নিউজ দিত সেই সব ময়না টিয়াই বাঘ পরিবারের প্রশংসা করতে করতে তেলের পুকুরে হাবুডুবু খাচ্ছে!
এখন যত দোষ শুধু তেলাপোকা আর মশাদের। কারণ এখনও তাদের কোন চ্যানেল নাই!
(…মোহাব্বত পাগলার দুঃস্বপ্ন থেকে পাওয়া! বাস্তবের কোন চরিত্র, ঘটনা বা কানকথার সাথে তিল পরিমাণ কোন মিল নাই!!!)
…মানিক শিকদারের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া