যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, ভিডিও ধারণ করে চাঁদা দাবির মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি।।
ফেনীর সোনাগাজী থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক নারীকে (২৯) অপহরণ করে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় মহিন উদ্দিন রাজু (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মহিন উদ্দিন সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ও সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি।

শনিবার দুপুরে ওই নারীকে ২২ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ডের জন্য ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালতে জবানবন্দী শেষে ওই নারীকে তার স্বামীর জিম্মায় দেয়া হয়েছে। একই সাথে গ্রেফতার আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ১৪ জুলাই শুক্রবার সকালে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সড়ক থেকে পৌর শহরে আসার পথে ওই নারী ও তার ৯ বছরের কন্যা অপহরণের শিকার হয়। এরপর তাদেরকে ফেনী শহরের ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্টেডিয়াম এলাকার একটি বাসায় নিয়ে তিন দিন আটকে রেখে অচেতন করে ওই নারীকে ধর্ষণ করে বখাটে মহিন উদ্দিন রাজু।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওই নারী বাদি হয়ে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে মহিন উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো দু’জনকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পৌর মেয়র নিজে গাড়িচালক অভিযুক্ত মহিন উদ্দিনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর খোয়াজ এলাকার আবদুস শুক্কুরের ছেলে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, অপহরণের শিকার ওই নারী পৌরসভার একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। বিয়ের আগে ও পরে মোবাইল ফোনে প্রায় সময় মহিন উদ্দিন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করত। গত ১২ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী যুবকের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি স্বামীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। তাদের ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মহিন উদ্দিনও বিবাহিত। তারও দু’টি সন্তান রয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় চলিত মাসের ৭ তারিখে ওই নারী যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেয়েকে নিয়ে দেশে এসে ফেনী শহরে বোনের বাসায় ওঠেন। পরদিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য ট্রাংক রোডে পৌঁছলে মহিন উদ্দিন তাকে কথা আছে বলে পাশের গলিতে নিয়ে যায়। ওই সময় আরো কয়েকজন তার সাথে যোগ দেয়। তারা ওই নারীকে ছুরি দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে একটি বাসায় নিয়ে যায়।

সূত্র আরো জানায়, এ সময় এক ব্যাক্তি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে কয়েকটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন। রাজি না হলে তারা সবাই মিলে মেয়ে ও তাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে প্রাণভয়ে বাধ্য হয়ে তিনি স্ট্যাম্পে চারটি স্বাক্ষর করেন। পরে তারা ওই নারীকে ছেড়ে দিলে বাসায় গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে বোনকে জানান। গত ১০ জুলাই ওই নারী কন্যাকে নিয়ে ফেনী থেকে সোনাগাজী পৌরসভার গ্রামের নিজ বাড়িতে আসেন। ১৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড ও পাসপোর্ট ফটোকপি করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে কন্যাকে নিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন রাস্তায় এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে যুবলীগ নেতা মহিন উদ্দিন ও তার দুই সহযোগী ঘটনাস্থলে এসে তাকে ও তার মেয়েকে জোরপূর্বক প্রাইভেট কারে তুলে ফেনীর দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় চিৎকার করলে মহিন উদ্দিন মা-মেয়ে দু’জনের নাকে চেতনানাশক স্প্রে দিয়ে তাদেরকে অচেতন করে ফেলে। পরে তারা ওই মা-মেয়েকে ফেনীর একটি বাসায় নিয়ে আটক রাখে। তিন দিন আটক রাখার সময়ে মহিন উদ্দিন তাকে অচেতন করে একাধিকবার ধর্ষণ করে এবং নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। পরে সে ছবি তার ভাই ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার স্বামীর কাছে পাঠায়।

ওই নারী বলেন, আটকের একপর্যায়ে মহিন উদ্দিনের পা ধরে কান্নাকাটি করলে সে তাদেরকে ৩০ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেবে বলে জানায়। মহিন উদ্দিন তাকে বিয়ে করেছে বলে ছবিযুক্ত করে ভুয়া নোটারি পাবলিকের কাগজপত্র তৈরি করে স্বামীকে তালাক দিতে বলে। বিষয়টি তার ভাই ও স্বামী জানার পর গত সোমবার রাতে মা-মেয়ে দু’জনকে মহিন উদ্দিন একটি গাড়িতে করে অচেতন অবস্থায় এক আত্মীয়ের বাড়ির সামনে রেখে পালিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার স্বামী দেশে আসার পর পুরো ঘটনা জেনে শুক্রবার রাতে থানায় মামলা করেছেন। তিনি বখাটে মহিন উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

গ্রেফতারকৃত মহিন উদ্দিন জানান, সে ওই নারীকে রোটারি পাবলিক ও কাবিনের মাধ্যমে বিয়ে করেছেন। তাকে আমেরিকা নেবে বলে তার কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে। তার পূর্বের স্বামী ও ভাইয়ের প্ররোচনায় মামলা করেছেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মা-মেয়েকে অপহরণের ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার রাজুকে আদালতের মাধ্যমে ফেনীর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ