যৌতুক না পেয়ে মারধরের পর গৃহবধূর চুল কেটে দিলেন স্বামী

ঠাকুরগাঁওয়ে যৌতুকের দাবি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় পাষণ্ড স্বামী ও সতীন রোজিনা বেগম এক গৃহবধূকে বেধরক মারপিট করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, লাঞ্ছনার শিকার ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ে ফেলে আসে তাকে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ বাঁশঝাড় হতে অজ্ঞান অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নির্যাতনকারীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন এবং মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেয়া অবস্থায় বাঁশঝাড়ের নীচে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন ওই নারী। নির্যাতনের শিকার সেই নারী বর্তমানে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।

অমানবিক ও চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের মধুপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার গোগর সরকারপাড়া গ্রামের রোজিনা বেগমকে প্রায় ২০ বছর আগে নূর আলম নামের এক ব্যক্তি দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে ঠাকুরগাঁও শহরের গোবিন্দনগর এলাকায় সংসার করছিলেন। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই যৌতুকের টাকা চেয়ে এবং তা না পেয়ে পিতৃ ও মাতৃহীন রোজিনাকে বেধরক পেটানো শুরু করেন স্বামী নূর আলম।

গেলো বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে রোজিনা বেগম মধুপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাড়িতে স্বামী নূর আলমের কাছে বাজার খরচের টাকা আনতে গেলে তার প্রথম স্ত্রী রুনা ও তার তিন ছেলে মিলে গৃহবধূ রোজিনাকে লাঠি দিয়ে বেধরক পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে রোজিনার মাথার চুল কেটে দেয় তারা।

এসময় রোজিনা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে ফেলে রাখা হয়। দীর্ঘ তিনঘন্টা পর রুহিয়া থানা পুলিশ জরুরি সেবা নম্বরের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাঁশঝাড় থেকে রোজিনাকে উদ্ধার করে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে।

মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহবধূ রোজিনা বেগমের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে উল্লেখ করে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন স্থানীয়রা। নির্যাতনের শিকার ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ রোজিনা বেগম তার স্বামী নূর আলম, তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের বিচার দাবি করেন। যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে মারপিট ও চুল কেটে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রোজিনার স্বামী নূর আলম।

তবে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ রকিবুল আলম চয়ন বলেন, আহত অবস্থায় রোজিনা বেগম হাসপাতালে এসেছিল; তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের দাগ রয়েছে। সেই সাথে তার মাথার চুলও কাটা রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রেখে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

নির্যাতিত গৃহবধূর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে ওরা এলেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা।

গৃহবধূ রোজিনাকে নির্যাতন ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার না হলে আবারও এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে আশংকা স্থানীয়দের।

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ