সঞ্চয়কারীদের দুঃসময়: মুনাফা কমেছে

অনলাইন ডেস্ক ।।

হালিমা খাতুন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। অবসর-সুবিধা ও সঞ্চিত—সব মিলিয়ে ৫০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রেখে প্রতি মাসে যা পান, তা দিয়ে সংসার চালাতেন। কয়েক মাস আগেও ব্যাংকে সঞ্চিত টাকার মুনাফায় সংসারের পুরো মাসের খরচ চালাতে পারতেন। কিন্তু এখন আর চলছে না। কারণ আগের চেয়ে এখন মুনাফা অনেক কম পাচ্ছেন। অন্যদিকে সংসারে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে অনেক কাটছাঁট করে এখন হিসাব মেলাতে হচ্ছে।

ব্যাংক খাতে আমানতের সুদহার এখন মূল্যস্ফীতির নিচে। ব্যাংকগুলোর সব ধরনের আমানতের সুদহার মিলিয়ে একটি গড় সুদহার প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে তথ্যে দেখা গেছে, গত আগস্টে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ওই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা ১১ বছরে সর্বোচ্চ। এরপর সেপ্টেম্বরে তা কিছুটা কমে হয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। আর গত মাসে তা আরও কিছুটা দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা এখনো আমানতের সুদহারের চেয়ে বেশি।

হালিমা খাতুনের মতো যারা ব্যাংকে টাকা জমা রেখে সংসার চালান, তাদের বেশিরভাগই কষ্টে পড়েছেন। তারা বলছেন, ব্যাংকে জমানো টাকার মুনাফা দিয়ে এখন সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে নিরাপদ বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগও পাওয়া যাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেকে সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। আবার কেউ ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করছেন।

আমানতকারীদের প্রকৃত সুদের হার নির্ধারণ করা হয় মূল্যস্ফীতির হার বাদ দিয়ে। ফলে সঞ্চয়কারীদের মুনাফা খেয়ে ফেলছে মূল্যস্ফীতি। তার পর ব্যাংকে জমা টাকার ওপর নির্ধারিত হারে আবগারি শুল্ক কেটে রাখা হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন গ্রাহক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমেছে, যা গত বছরের জুনে ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। কয়েক বছর ধরে সেপ্টেম্বরে মেয়াদি আমানতে ১২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি থাকলেও চলতি বছরের তা নেমেছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়কারীরা যে মুনাফা পাচ্ছেন, তাতে গ্রাহকের কোনো লাভ হচ্ছে না। অনেকে সমস্যায় পড়বেন—এটাই স্বাভাবিক। এজন্য ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিয়ে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তাহলে আমানতের সুদহার বাড়বে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, মূল্যস্ফীতির তুলনায় আমানতের সুদহার সবসময়ই বেশি থাকা উচিত। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ নিম্নমধ্যবিত্ত অনেকের সংসার ব্যাংকের সুদের ওপর নির্ভরশীল। তাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে সুদহার অবশ্যই বাজারভিত্তিক করা উচিত। তিনি বলেন, মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার সরবরাহ করে টাকা তুলে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অবস্থায় সঞ্চয় বাড়াতে উৎসাহিত না করলে ব্যাংকগুলোর আমানত কমে যেতে পারে।

আরো দেখুনঃ