সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যাদেশের মেয়াদ শেষে হলেও শুরু হয়নি নতুন ভবন নির্মাণ কাজ
জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী)।।
ফেনীর সোনাগাজীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। ১১মাস ওই প্রকল্পের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে আরও দুই মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। তবে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। ভবন নির্মাণ হবে কি না, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে শঙ্কায় রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি ভবন, একটি ৩১ শয্যা ও অন্যটি ১৯ শয্যাবিশিষ্ট। চলতি বছরের জানুয়ারীতে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনুমতি নিয়ে তা ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে গত বছরের মার্চে তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণে স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হলে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের দায়িত্ব পায়। ভবন নির্মানের জন্য ১১ মাস সময়সীমা বেধে দিয়ে একই বছরের ২৭ জুন কার্যাদেশ পাওয়ার নির্ধারিত ১১মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করেনি। ফলে এখানে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত আরও দুটি মাস চলে গেছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শুরুর দিকে ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৫ টাকা চুক্তি মূল্যে মনি এন্ড জেএইচএন জেবি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ পাওয়ার দিন থেকে ১১ মাসের মধ্যে চলতি বছরের ২৭ জুন কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু পুরোনো ভবন ভাঙতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো নির্মাণসামগ্রী এখানে নিয়ে আসেননি ঠিকাদার। কাজ শুরুর জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে বারবার চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী জামাল উদ্দিন বলেন, গত কিছুদিন আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের লোকজন এসে ছোট একটি গর্ত খুঁড়ে পাথরের একটি খুঁটি দিয়ে মাটির ধারণ ক্ষমতা পরীক্ষা করার কথা বলে চলে যায়। এর পর খালিস্থানে কিছু বালু ফেলেন। সেখানে আর কাউকে দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, ১৯ শয্যাবিশিষ্ট ভবনটিতে দ্বিতীয় তলায় ডেলিভারি ওয়ার্ডের পাশের একটি কক্ষে পুরুষ এবং তৃতীয় তলায় নারী ও শিশু রোগীদের পাশাপাশি রাখা হয়েছে। শয্যা না পেয়ে বেশির ভাগ রোগী ও তাদের স্বজনেরা রয়েছেন বারান্দা, সিঁডি ও মেঝেতে। এদিকে কক্ষসংকটের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসকরা গাদাগাদি এক কক্ষে দুই-তিনজন করে বসে রোগী দেখছেন। বহির্বিভাগেও রোগীদের চাপ বেশি দেখা গেছে। ভবনে পাশের একটি খালি জায়গায় টিনশেড দিয়ে জরুরী বিভাগের জন্য একটি নড়বড়ে ঘর করা হয়েছে। সেখানে জরুরী বিভাগে আসা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে রোগীদের সুবিধার্থে ১৯ শয্যার ভবনের ছাদে একটি শেড নির্মান করার কথা ছিল। তাও নির্মান করা হয়নি।
জরুরী বিভাগের পাশে টিনশেডে করা হয়েছে রান্নার ঘর। প্রচন্ড গরমে টিনশেডের ঘরে জরুরী বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগিদের চরম দুর্ভোগে শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া কর্তব্যরত চিকিৎসকরাও চরম দুর্ভোগ টোহাতে হচ্ছ।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, অন্তবিভাগে ভর্তি থাকা ২০-২৫জন রোগী শয্যা পেয়েছেন। অন্যরা রোগীরা ওয়ার্ডের মেঝেতে, হাসপাতালের বারান্দায়, সিঁডি ও আশপাশে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। কক্ষ সংকটের কারনে দায়িত্বরত নার্স সদস্যরাও রোগীদের সঙ্গে বারান্দায় ও মেঝেতে বসে সেবা দিচ্ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি এক শিশুর মা বলেন, তার শিশু সন্তানকে জ্বর নিয়ে ভর্তি করার পর শয্যা খালি না থকায় দোতলার সিঁড়ির ওপর রাখা শয্যায় থাকতে হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার রেজিয়া বেগম বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রতিদিনই শয্যার চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। সর্বোচ্চ একদিনে হাসপাতালে দেড়শ রোগী ভর্তি থাকার রেকর্ড রয়েছে। নতুন ভবনে শয্যার সংখ্যা বাড়ালে রোগীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা পাবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চিকিৎসাসেবা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। রোগীদের দুর্ভোগের কথা ভেবে উপজেলা ও জেলা সমন্বয় সভায় ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দেরি করার বিষয়টি তুলে ধরেছি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোথাও থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এদিকে শয্যা ও কক্ষসংকটে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে দাপ্তরিক কার্যক্রমেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মান জরুরী হয়ে পড়েছে।
ফেনীর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, কাজ শুরু করতে মৌখিক এবং দাপ্তরিকভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের পুরোনো ভবন ভাঙতে জটিলতা সৃষ্টিসহ নানা সমস্যার কারনে দেরিতে ভাঙার কাজ শেষ হয়েছে। দেরিতে হলেও গত মাস থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু ঠিকাদার এখনও কাজ শুরু করতে গড়িমসি করছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু না করা হলে কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. জিসানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।