সোনারগাঁয়ে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ
নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁ(নারায়ণগঞ্জ)
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের খামারগাঁও এলাকায় নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন ধরে খামারগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে মেঘনা নদী পর্যন্ত ড্রেনসহ এ রাস্তাটি নির্মাণ কাজ শুরু করে এম আই কনষ্ট্রাকশন লিমিডেট নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণের করায় ওই এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবির মুখে অবশেষে¬ গতকাল সোমবার সকালে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিহীদের সরকারী খাস জমিতে ভূমিহীন পরিবারকে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের খামারগাঁও গ্রামে ১৬টি ঘর নির্মাণ করে দেন স্থানীয় প্রশাসন। এ প্রকল্পের বাসিন্দা ও স্থানীয়দের যাতায়তের জন্য হাটু পানি মারিয়ে চলতে হতো। এ আশ্রায়ন প্রকল্পে যাতায়ত করতে হলে ভোড়ান্তিতে পড়তে হয়েছে এলাকাবাসী ও এ প্রকল্পের বাসিন্দাদের। টানা বৃষ্টির কারনে পানি জমে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। নোংরা ও ময়লাযুক্ত পানি মারিয়ে চলতে হতো তাদের। বৃষ্টির কারনে পানিতে তিনটি ঘরও ভেঙ্গে পড়েছিল। ফলে রাস্তাটি সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রকল্পের বাসিন্দাদের নির্বিঘ্নে যাতায়তের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সী (জাইকা) এর অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শরু করা হয়। ৬ শ ৮৫ মিটার রাস্তা ৩১ লাখ ৪৯ হাজার ২শ ৭৪ টাকা ব্যয়ে এ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। আগামী ১০ অক্টোবর এ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিন্মমানের ইট, খোয়া বালু, রড দিয়ে এ নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশে যা শর্ত দেওয়া হয়েছিল ওই শর্ত না মেনেই কাজ করছে তারা। এলাকাবাসী নিন্মমানের কাজে বাধা দিতে গেলে মামলার ভয় দেখিয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের কাজের দেখবাল করছেন না।
খামারগাঁও গ্রামের জসিমউদ্দিন বলেন, ছয়মাস পানির নিচে থাকা ইটের খোয়া এ নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছে। ড্রেনে আস্তর দেওয়ার কথা থাকলেও তারা শুধু মাত্র আনজি ( প্রলেপ) দিয়ে কাজ সেরে নিচ্ছে। এছাড়াও ৪ বস্তা খোয়া , ৪ বস্তা বালুতে এক বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করে এ নির্মাণ কাজ করছে। তবে রড একেবারেই নামে মাত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিন্মমানের কাজ তদারকি করার জন্য প্রশাসনের কেউ এখানে আসেন না।
খামারগাঁও গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, নিন্মমানের কাজের জন্য ঠিকাদারের লোকজনকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে কাজে বাধা দেওয়া হয়েছিল। আমরা কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে ধমক দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করে রাখে। চাঁদাবাজির মামলা করারও হুমকি দেওয়া হয়।
খামারগাঁও আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় ও প্রশাসনের সহযোগিতায় আমি ঘর পেয়েছি। আমাদের এ প্রকল্পে ১৬জন বাসিন্দা। এক সময় এ রাস্তা দিয়ে চলতে হলে পানি মারিয়ে আসতে হতো। এখন সরকার রাস্তাও করে দিতেছে। এ রাস্তার কাজ খুব খারাপ হচ্ছে। এ রাস্তার কাজ দেখে শুনে করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি।
বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নবীর হোসেন বলেন, নিন্মমানের কাজ হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতার প্রমান পেয়েছি। ভালো মানের কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেছি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম আই কনষ্ট্রাকশনের সত্বাধিকারী কাউসার হামিদ বলেন, আমি সাইডে থাকি না। আমার লোকজন সেখানে কাজ করে। তাদের নির্দেশ দিয়েছি নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার না করতে। যদি নিন্ম মানের সামগ্রী থাকে তা সরিয়ে নেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরজুরুল হক বলেন, নিন্মমানের কাজের অভিযোগ পেয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সঠিক সামগ্রী ব্যবহার না করলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ এলাহী বলেন, নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কাজের সঠিক মান না পাওয়া গেলে এগুলো ভেঙ্গে পুনরায় কাজ আদায় করে নেওয়া হবে।