হিলিতে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী সাদিয়া
হিলি প্রতিনিধি
দিনাজপুরের হিলিতে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া পারভিনের হার্টে তিনটি ফুটা ধরা পড়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সাদিয়ার হার্টের অপারেশন করতে হবে যার জন্য প্রয়োজন চার লক্ষ টাকা। কিন্তু হোটেল শ্রমিক বাবা আর ছেঁড়া বস্তা সেলাই করা মায়ের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা অসমম্ভব। তাই একপ্রকার চিকিৎসার অভাবে দিন-দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে সাদিয়া। সাদিয়ার চিকিৎসায় বিত্তবানদের সাহায্য প্রত্যাশী সাদিয়ার পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
হিলির দক্ষিনবাসুদেবপুরের চুরিপট্টি এলাকার সানাউল ইসলামের ১১ বছর বয়সি মেয়ে সাদিয়া পারভীন। মেয়ের চিকিৎসা ব্যায় মিটাতে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে পরিবারটি। মেয়ের চিকিৎসায় সর্বশান্ত পরিবারটি চান অন্যের সাহায্য। এদিকে একসময়ের চঞ্চলা এই মেয়ে শিশুটি এখন শুধুই নিঃশ্চুপ। সমবয়সী ছেলে মেয়েরা সবাই এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করলেও সাদিয়া তার রোগের কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। অল্প একটু হাটতেই হাঁপিয়ে ওঠে সে, বন্ধ হয়ে আসে শ্বাস প্রশ্বাস। স্কুলে ভর্তি হলেও চলাফেরা করতে না পারায় এক বছর ধরে স্কুলে যেতে পারেনা সে। দিন যতই যাচ্ছে ততই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে সাদিয়া।
শিশু সাদিয়া পারভিন বলেন, আমিও আগে ভালো ছিলাম স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ালেখা করতাম বন্ধুদের সাথে খেলা ধুলা করতাম। কিন্তু এখন আর স্কুলে যেতে পারিনা বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতে পারিনা। আমি হাটতে গেলে হাফশে যায় একটু হাটলেও পরে আর হাটতে পারিনা। বুকের মধ্যে কেমন যেন করে দৌড়াদৌড়ি করতে পারিনা আবার কখনো কখনো খেতে পারিনা। আমার হার্টে ফুটা হয়েছে যার কারনে আমার বন্ধুরা স্কুলে যায় আমি যেতে পারিনা ওদের সাথে খেলতে পারিনা বাড়িতে একা একা বসে থাকি আমার খুব খারাপ লাগে। ওদের সাথে স্কুলে যেতে পারলে খেলাধুলা করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগতো।
সাদিয়ার মা সালমা খাতুন বলেন,আমার বাচ্চার হার্টে ৩টি ফুটা ধরা পড়েছে চিকিৎসক বলেছে দ্রæত ওর অপারেশন করতে হবে। কিন্তু আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ আমি বস্তা সেলাই করি আমার স্বামী হোটেলে কাজ করে জীবনা চালানো অসম্ভব ব্যাপার। যার কারনে আমি আমার মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারিনি। নিজেদের যা ছিল তাই দিয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে এতদিন ওষধ পত্র কেনা চিকিৎসাপাতি করা পরিক্ষা নীরিক্ষা করেছি কিন্তু এখন আর পারছিনা। এজন্য দেশের মানুষের কাছে আবেদন সকলে যদি একটু আর্থিক সহায়তা করে তাহলে আমার মেয়েটা বেচে যাবে। আমার যদি সেরকম অবস্থা থাকতো তাহলে পারে মানুষের নিকট হাত পাততামনা।
সাদিয়ার বাবা সানাউল ইসলাম বলেন, ৩বছর বয়সে সাদিয়ার হার্টে ধরা পড়ে তিনটি ছিদ্র। দিন যতই যাচ্ছে বাড়ছে হার্টের ছিদ্রের আকার। আমি হোটেলে কাজ করে কোনরকম করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ আমি দিন আনা দিন খাটা মানুষ যার কারনে আমার বাচ্চার আমি সেভাবে চিকিৎসা করতে পারিনি। এতদিন নিজেদের যা ছিল সেই সাথে আশেপাশের মানুষের নিকট সাহায্য নিয়ে এনজিও থেকে লোন তুলে সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করেছি। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসক বলেছে দ্রæত ওর অপারেশন করতে হবে কিন্তু টাকা লাগবে ৪লাখ টাকা। এখন অবস্থা ভালো রয়েছে অপারেশন করতে পারলে সেড়ে উঠবে আর অপারেশন করতে না পারলে পরবর্তীতে তা ক্যান্সারের দিকে ধাবিত হবে। কিন্তু আমাদের যে আয় তা দিয়ে কোনদিনই এই অপারেশন করানো সম্ভব নয়। শুধু অর্থের অভাবে আমার বাচ্চাটা দিন দিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই কারনে আমি সকলের নিকট আবেদন জানাচ্ছি আমার বাচ্চাটির জন্য যদি কারো দয়া হয় তাহলে যেন সাহায্য করে।
স্থানীয় এলাকাবাসী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এরা অত্যান্ত গরীব একটি পরিবার ওর মা বাড়িতে টুকটাক বস্তা সেলাই করে আর বাবা হোটেলে শ্রমিকের কাজ করে আড়াই থেকে তিনশো আয় এই দিয়ে তারা কি সংসার চালাবে না মেয়ের চিকিৎসা করাবে। এপর্যন্ত মানুষের নিকট থেকে ধারদেনা করে এনজিওর কাছ থেকে লোন তুলে মেয়ের পিছনে অনেক টাকা খরচ করেছে। কিস্তির টাকা তুলে সেই টাকা দিতে পারেনা একেবারে করুন অবস্থা। আমরা চাই সবাই যদি বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকায়ে আর্থিক সহযোগীতা করে তাহলে পারে মেয়েটার জীবনটা বেচে যেত।
অপর এলাকাবাসী সিরাজুল ইলাম বলেন, সাদিয়ার বাবা মার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালোনা ওর বাবা হোটেলে মেসিয়ারি করে ওর মা বাড়িতে ছেড়া বস্তা সেলাই করে কোনরকম করে সংসার চালায়। যার কারনে টাকা পয়সার অভাবে ওর ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারছেনা। এখন ডাক্তার বলছে অপারেশন করতে হবে ৪লাখ টাকা লাগবে। যেখানে টাকার অভাবে চিকিৎসাই করাতে পারছেনা সেখানে এতগুলো টাকা কোথা থেকে যোগাড় করবে।আর আমরা এলাকাবাসী হিসেবে তাদের যে কিছু সাহায্য সহযোগীতা করবো সেটিও করতে পারছিনা। আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ দিন আনা দিন খাটা গরীব অসহায় মানুষ। যার কারনে আমরাও তাদের পাশে দাড়াতে পারিনা।
অপর এলাকাবাসী বুলন বেগম বলেন, কিভাবে টাকার অভাবে বাচ্চাটা দিন দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। যার কারনে আমরা বাচ্চাটির দিকে ঠিকমত তাকাতে পারিনা। কিন্তু আমরা যে দশটা টাকা দিয়ে সাহায্য করবো সেটিও করতে পারিনা আমাদের নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। যার কারনে আমরাও বাচ্চাটিকে দেখে আফসোস করি দু:খ হয় কিন্তু কিছু করার নেই আমাদের। আমরা চাই সবাই যদি বাচ্চাটির সহায়তায় এগিয়ে আসে তাহলে বাচ্চাটি বেচে যাবে।
অপর এলাকাবাসী রাব্বি হোসেন বলেন, আমার পাঁচবছরের একটা বাচ্চা রয়েছে আমার বাচ্চা মুখের সামনে দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে সাদিয়ার ইচ্ছা হয় ওদের সাথে খেলতে একটু দৌড়াদৌড়ি করতে কিন্তু সাদিয়া তা করতে পারেনা সেসবসময় নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে যা আমাদেরকে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কি করার তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তারা যে মেয়েটার চিকিৎসা করাবে সেটাও পারছেনা।
বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক বলেন, সাদিয়া পড়ালেখায় বেশ ভালো একজন ছাত্রী ছিল। কিন্তু শিশুটি বর্তমানে অসুস্থ্য তার হার্টে ফুটা রয়েছে যার কারনে সে বেশ কিছুদিন ধরে স্কুলে আসতে পারছেনা। বর্তমানে শিশুটির অপারেশনের প্রয়োজন যা করতে ৪লাখ টাকার প্রয়োজন।সমাজের বিত্তবান দানশীল ব্যাক্তি যারা রয়েছেন তারা সকলেই যদি ওই শিশুটির জন্য এগিয়ে আসেন তাহলে ওই শিশুটির অপারেশন যেমন সম্পুর্ন হবে। তেমনি সে আবারো সুস্থ্য হয়ে আমাদের স্কুলে ফিরে আসবে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মত লেখাপড়া করবে আমরা স্কুল কতৃপক্ষ সেই কামনা করি।
সকলের সহযোগীতায় পারে ছোট্ট শিশু সাদিয়াকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে। সাদিয়াকে সাহায্য পাঠাতে তার বাবা সানাউল ইসলামের (বিকাশ) নং-০১৯৬৮৩১৬৩৪৬।