হিলিতে লোহার টুং টাং শব্দে মুখর কামারপাড়া

হিলি প্রতিনিধি

আর মাত্র তিনদিন পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। আর তাই পশু কোরবানীর জন্য চাকু ছুরি দা বটি তৈরি করতে কামারদের নিকট ভিড় করছেন ক্রেতারা। কয়লায় লোহা পুড়িয়ে তাতে হাতুড়ি পিটিয়ে ক্রেতাদের চাহীদামত পণ্য সরবরাহ করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের হিলির কামারগন। গতবারের চেয়ে কাজ ভালো হওয়ায় দারুন খুশি কামারগন তবে বিক্রি ভালো না হওয়ায় চিন্তিত এর ব্যাবসায়ীরা।

কামারের নিকট চাকু বানাতে আসা সিদ্দিক হোসেন বলেন, কোরবানীর ঈদের আর মাত্র তিন দিন বাকি যার কারনে পশু কোরবানী দিতে চাকু ছুরি দা বটি ধার করতে হবে এজন্য কামারের নিকট এসেছি এসব ধার করে নিতে। বাড়িতেই পশু কোরবানীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরন রয়েছে যার কারনে সেগুলোই ধার করে নিতে আসা। এছাড়া এবারে এসব জিনিসের দাম বেশি যার কারনে দুএকটি জিনিসের প্রয়োজন হলেও না কিনে পুরানোগুলিই ধার করিয়ে নিচ্ছি। আমার মতো অনেকেই একই কাজ করছে তারাও তাদের পুরানো জিনিসপত্রগুলি ধার করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

অপর ব্যাক্তি আসলাম হোসেন বলেন, গতবছর যে চাকু বা বটি ধার করে দিতে কামাররা ৩০ থেকে ৪০টাকা নিয়েছেন এবারে তা বেড়ে ৭০টাকা চাচ্ছে। এছাড়া চামড়া ছাড়ানোর যে ছোট চাকুগুলি ছিল সেগুলোর মজুরি যা ছিল তার চেয়ে এবারে ২০/২৫টাকা করে বেড়ে গেছে। এখন কোরবানীর গরু ছাগলের যেমন দাম বেড়ে গেছে এর সাথে সাথে চাকু ছুরি দা বটির দাম বেড়ে গেছে। এতে করে যারা হয়তো ছোটখাটো বা ছাগল কোরবানী দিবে তাদের মতো মানুষদের জন্য সমস্যা।

হিলি বাজারের কৃষœ কর্মকার নামের এক কামার বলেন, গতবছর করোনার কারনে সেভাবে মানুষজন পশু যেমন কোরবানী দিতে পারেনি তেমনি আমাদের কাজকর্ম তেমন হয়নি। কিন্তু এবারে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা ভালো হওয়ায় এবারে অনেক মানুষই কোরবানী দিবে যার কারনে কাজের চাপ অনেকটা বেশী। তবে এবারে লোহার দাম বেশী হওয়ায় মানুষজন নতুন জিনিসপত্র কম কিনছে তারা তাদের পুরানো জিনিসপত্র যেগুলো রয়েছে সেগুলো ধার করে নিতে বেশী আসতিছে। এছাড়া আগে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও হোটেলগুলোতে মানুষজন খড়ি পুড়িয়ে রান্না বান্না করতো যার কারনে কম দামে কয়লা কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন মানুষজন সবাই গ্যাসে রান্না করায় সেই কয়লা তেমন পাওয়া যাচ্ছেনা। এদিকে মৌসুম শুরু হওয়ায় কয়লার চাহীদা বাড়ায় দোকানীরা কয়লার দাম বেড়ে দিয়েছে। গতবছর যে কয়লা প্রতিডালি ৩০/৪০টাকা কিনেছিলাম এবার সেই কয়লা দাম বাড়িয়ে ৬০টাকা করে নিচ্ছে। যার কারনে চাকু ছুরি দা বটি হাসুয়া ধার দেওয়ার মজুরি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বছর জুড়ে অলস সময় বসে থাকলেও এই কোরবানীর ঈদের সময় বাড়তি কাজের চাপ থাকায় এই সময়ের বাড়তি আয় রোজগার দিয়ে সারাবছর চলতে হয়। কিন্তু এবারে লোহা ও কয়লার দাম বৃদ্ধির ফলে বাড়তি কাজ হলেও আমাদের যেভাবে লাভবান হওয়ার কথা সেভাবে লাভবান হতে পারছিনা।

হিলি বাজারে লোহার তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতা সবুজ মোহন্ত বলেন, গতবছরের তুলনায় এবারে লোহার দাম বেশী সেই সাথে কয়লার দাম বেশী হওয়ায় কামারকে মজুরি বেশী দিতে হচ্ছে। এর ফলে চাকু ছুরি দা বটি এগুলোর দাম একটু বেশী যার কারনে মানুষজন এবারে পুরানো জিনিসপত্রই বেশী ব্যবহার করছে। এতে করে আমাদের দোকানের নতুন জিনিসপত্র তেমন কেউ কিনছেনা এতে করে এসব জিনিসের বেচাকেনা নেই বললেই চলে। ঈদের মাত্র আর তিন দিন বাকি থাকলেও একেবারে বসে থাকা তেমন বেচাকেনা নেই বললেই চলে এতে করে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে দোকানে মালপত্র তুলেছি কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় আমরা বিপাকে পড়ে গেছি। সরকার যদি একটু আমাদের দিকে লক্ষ্য রাখতো তাহলে আমরা ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারতাম।

হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ বলেন,কামারসহ এই ধরনের পেশাগুলো যেন বিলুপ্ত না হয়ে যায় হারিয়ে না যায় এজন্য ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের তালিকা সংগ্রহ করছেন। তারা যেন সুন্দরভাবে এই পেশাই নিয়োজিত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এজন্য প্রধানমন্ত্রী প্রনোদনার ব্যবস্থা করবেন। সেই সাথে আমরা যারা জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন রয়েছি আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগীতা করা হবে যেন তারা তাদের পেশা ধরে রাখতে পারেন।

আরো দেখুনঃ