হিলি ইমিগ্রেশন চালু হলেও ভারতের পথ দিয়ে এখনো যাত্রী বহিগর্মন শুরু হয়নি

হিলি প্রতিনিধি।।

করোনার কারনে দীর্ঘ ১৪মাস বন্ধের পরে দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট চালু হলেও ভারত যাত্রী গ্রহন না করায় এখনো এই পথ দিয়ে যাত্রী বহিগর্মন শুরু হয়নি। শুধুমাত্র ভারত থেকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রীরা দেশে ফিরতে পারছেন। এদিকে যাত্রী বহিগর্মন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন এই পথ দিয়ে চলাচলকারী রোগীসহ ব্যবসায়ীরা। তেমনি সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আদায় থেকে। অবিলম্বে এই পথ দিয়ে যাত্রী বহিগর্মন প্রক্রিয়া চালুর দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ রোগীরা।

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রামন বেড়ে যাওয়ার কারনে গতবছরের ২৩শে মার্চ মাসে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে দুদেশের মাঝে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। পরে করোনার সংক্রামন কিছুটা কমলে দীর্ঘ ১৪মাস পর ১৬ই মে থেকে পুনরায় হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে দুদেশের যাত্রী পারাপার চালুর জন্য এর কার্যক্রম খুলে দেওয়া হয়।

বর্তমানে ভারত থেকে এই পথ দিয়ে বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রীরা আসতে পারলেও করোনার অজুহাতে ভারত যাত্রীগ্রহন শুরু না করায় এখনো এই পথ দিয়ে যাত্রী বহিগর্মন কার্যক্রম শুরু হয়নি। প্রতিবছর এই ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে বহিগর্মন করা যাত্রীদের থেকে ৫কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেলেও গত ১৯মাস ধরে যাত্রী বহিগর্মন বন্ধ থাকায় সরকারের প্রায় ৭ কোটি ৪৪লাখ টাকার মতো রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই পথ দিয়ে ৯৪হাজার ৭৯জন যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছে বিপরীতে ভারত থেকে ৮৬হাজার ১৫০জন যাত্রী দেশে এসেছে।

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা শুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, আমার বাসা দিনাজপুরেরর পার্বতীপুর উপজেলায় সে হিসেবে আমার কাছের বর্ডার হলো হিলি। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এখনো এই পথ দিয়ে যাত্রী গ্রহন না করায় আমরা এই পথ দিয়ে যেতে পারিনি। আমাদেরকে যশোহরের বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে ঢুকতে হয়েছে ছেলের চিকিৎসার জন্য।

এতে করে আমাদেরকে অনেক রাস্তা যেমন ঘুরতে হয়েছে, তেমিন বাচ্চাকে নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তেমনি আমাদের খরচ অনেক বেশী হয়েছে, হিলি দিয়ে যেখানে মাত্র দুঘন্টার মধ্যে মাত্র ২ থেকে ৩শ টাকার মধ্যে এখানে আসতে পারি কিন্তু সেখানে ২/৩হাজার টাকা বেশী দিয়ে ওই দিক দিয়ে যাওয়া আমাদের মতো গরীব মানুষের জন্য অনেক কষ্টকর।

দেশে ফেরা অপর যাত্রী গৌতম চন্দ্র সাহা বলেন, আমার বাড়ি নওগায়, আমার স্ত্রী গুরুত্বর অসুস্থ্য এই রোগী নিয়ে আমি তো বাংলাদেশে খুব সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছিলাম। পাসপোর্ট করলাম এরপর ভিসা করলাম সেখানে বর্ডার দিলো বেনাপোল। হিলি ছাড়া সেই বেনাপোল দিয়ে যেতে খুব কষ্ট, এত কষ্ট পেয়েছি যে জীবনে ভুলবোনা কষ্টের কথা। সেই সাথে এত পরিমান খরচ, হিলি দিয়ে যেতে যা খরচ লাগতো সেখানে ওই পথ দিয়ে ডাবলের বেশী খরচ লাগছে। কাস্টমস ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সম্পুর্ন বাংলাদেশ থেকে পার হয়ে ভারতে গেলাম।

এরপর সেখান থেকে শেয়ালদহ স্টেশনে গেলাম সেখানি গিয়ে আমার স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়ে ফেললাম। খুব কষ্ট করে তাদেরকে খুজে বের করে চিকিৎসা শেষ করে আবারো বেনাপোল দিয়ে বের হতে বলে কিন্তু আমি ওই পথ দিয়ে না যাওয়ার কারনে আবারো এনওসি নিয়ে হিলি দিয়ে ফেরত আসছি। যদি হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে যাওয়া যেত তাহলে আমাদের মতো মানুষদের যারা ভারতে চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে যায় তাদের জন্য খুব ভালো হতো।

স্থানীয় বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমার স্ত্রীর মেরুদন্ডের হাড়ে সমস্যা ভারতে গিয়ে একবার চিকিৎসা করিয়ে নিয়ে এসেছি। পরবর্তীতে আবারো চিকিৎসক যেতে বলেছিল কিন্তু যাওয়া হয়নি করোনার কারনে। এখন ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট খুললেও ভারত কর্তপক্ষ এই পথ দিয়ে যাত্রী গ্রহন না করায় আমরা হিলি দিয়ে রোগী নিয়ে ভারতে যেতে পারছিনা। আর আমার স্ত্রীর যে অবস্থা তাতে করে জার্নি করে অন্য বর্ডার দিয়ে যাওয়া সম্ভব না তাই হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে যদি ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে খুব ভালো হতো। আমার মতো এই অঞ্চলের অনেক মানুষদের সুবিধা হতো।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট বন্ধ রয়েছে এই কারনে আমরা যারা ব্যবসায়ী রয়েছি তারা ব্যাপকভাবে সমস্যায় পড়েছি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে আমরা ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। ভারতীয় রফতানিকারকদের সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারছিনা।

এছাড়া পণ্যের দাম দরের বিষয় ও পণ্যের মানের বিষয় আমরা ভারতে নিজেরা গিয়ে কিংবা আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে সেটির মান নিশ্চিত করতে হয়। শুধুমাত্র এই চেকপোষ্ট দিয়ে যাওয়া বন্ধের কারনে অনেক খারাপ পণ্য ভারতীয় ব্যবসায়ীরা রফতানি করছেন এতে করে আমরা আমদানিকারকরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি তেমনি দেশের মানুষ মানসম্পুর্ন খাবার পাচ্ছেনা। এজন্য আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই অতিসত্বর যেন অন্যান্য চেকপোষ্টের মতো হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া যায় সেজন্য এটি অতিসত্বর চালু করার দাবী জানাচ্ছি।

সিআ্যন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী শাহিনুর রেজা বলেন, আমাদের এই হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে ভারত থেকে যাত্রীরা আসতে পারছে কিন্তু আমরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতে পারছিনা। অবিলম্বে যেন বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাসপোর্ট যাত্রীরা যেতে পারে সেজন্য এটি খুলে দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি। এতে করে ব্যবসায়ীদের যেমন সুবিধা হবে তেমনি উত্তরবঙ্গের পাসোপর্ট যাত্রী যারা কিনা ভারতে চিকিৎসা গ্রহন করে তারা চিকিৎসা গ্রহনের সুযোগ পাবে। তেমনি সরকার যে রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেটি আবারো শুরু হবে।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম নুরুল আলম খান বলেন, করোনার পুর্ববর্তী সময়ে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৫শ জন যাত্রী যাওয়া আসা করতো ভারত-বাংলাদেশের মাঝে। এর মধ্যে অর্ধেক পরিমান যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতো তেমনি একই পরিমান যাত্রী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। কিন্তু করোনার কারনে গতবছরের মার্চ মাস থেকে এই পথ দিয়ে যাত্রী যাওয়া আসা বন্ধ ছিল। সম্প্রতি এই পথ দিয়ে আবারো ভারত থেকে বাংলাদেশে যাত্রী আসা শুরু হয়েছে কিন্তু যাত্রী যাওয়া এখনো শুরু হয়নি। আর যাত্রী না যাওয়ার কারনে প্রতি যাত্রীদের নিকট যে ৫শ টাকা করে ভ্রমনকর পাওয়া যেত সেটি থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে।

আয়েশা আক্তার/অননিউজ24

আরো দেখুনঃ