শবে কদরের মর্যাদা ও ফজিলত

মুফতি এম হেদায়েত হোসাইন

রহমাত, মাগফিরাত আর নাযাতের বার্তা নিয়ে প্রতিবছর একবার হাজির হয় পবিত্র মাহে রমাদ্বান। এই মাসে প্রত্যেক বালেগ, আকেল, মুসলিমের উপর রোযা রাখা ফরজে আইন।

আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “হে মুমিনগন! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমারা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা আল বাকারা:২/১৮৩)

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন রমজান মাস আগমন করে তখন আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয় আর আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’য়ালার সমস্ত রহমাতের দরজাগুলা খুলে দেওয়া হয়।” (বুখারী, মুসলিম)

এ মাসেই নাযিল হয়েছিলো মানবজাতির পথপ্রদর্শক গ্রন্থ পবিত্র আল-কুরআন, আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা’য়ালা বলেন, “রমজান মাস, যে মাসে নাযিল করা হয়েছে পবিত্র কুরআন মানবজাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে এবং সঠিক পথের বর্ণনা করে আর সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে।” (সূরা আল-বাকারা:২/১৮৫)

যে রাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছিলো সেই রাতই ছিলো শবেকদরের রাত। শব ফার্সি শব্দ যার অর্থ- রাত বা রজনী আর কদর আরবী শব্দ যার অর্থ -সম্মান, মর্যাদা, দামী ইত্যাদি।

দুটি শব্দের যৌগিক অর্থ-সম্মানিত রজনী বা মর্যাদাপূর্ণ রজনী।
এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা’য়ালা বলেন, “নিশ্চয় আমি (এ কুরআন) নাযিল করেছি কদরের রাতে, তুমি কি জানো কদরের রাত কি, এ রাত হলো হাজার হাজার রাতের চেয়েও উত্তম, এ রাতে জিবরিলআমিন ও ফিরিস্তা নেমে আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল নির্দেশনা ও শান্তির বার্তা নিয়ে আর এসময় হলো ফজর পর্যন্ত।” (সূরা আল-কদর:৯৭/১-৫)

এ রাতকেই অন্য জায়গা বরকতময় রজনী বলা হয়েছে “নিশ্চয় আমি এ কুরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রজনীতে।” (সূরা আদ-দুখান:৪৪/৪)

এ রাতের এতো মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে যে, কেউ যদি একটি টাকা এ রাতে দান করে তাহলে অন্য মাসে হাজার হাজার টাকা দান করার সওয়াব পাবে। এক রাকয়াত নামাজ পড়লে হাজার হাজার রাকয়াত নামাজ পড়ার সওয়াব পাবে।
যেকোনো ভালো কাজ করলেই অন্য রাতের তুলনায় হাজার হাজার গুন সওয়াব বেশি পাবে।

কদরের রজনী সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কদরের রাত ক্বিয়ামুল লাইল করে কাটিয়ে দেয় তার জীবনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হয়।” (বুখারী, মুসলিম)

এ রাত পবিত্র রমাদ্বান মাসের শেষ দশকের মধ্যে নিহিত রয়েছে। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা রমাদ্বানের শেষ দশকের বিজোড় রাত গুলোতে কদর তালাশ করো”

মানুষ নির্দিষ্ট রাতে ইবাদত করবে এজন্য এই রাত্রি নির্দিষ্ট করা হয়নি। বান্দা প্রতিটি রাতে আল্লাহর দরবারে তার কপাল টেকিয়ে হৃদয় মন উজার করে মহান মা’বুদের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে এজন্য রমাদানের শেষ দশকের মধ্যে কদর তালাশ করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে বিজোড় রাত্রি গুলোতে অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখ।

আমাদের দেশে ২৭ তারিখকে নির্দিষ্ট করে ইবাদত করা হয়। এটা মোটেও উচিত নয়। বরং মুমিনের কাজ হবে প্রতি বেজোড় রাত গুলোতে কদর তালাশ করা।

কদরের ফজিলত যেন ছুটে না যায় এজন্য রাসূল (সাঃ) প্রতি রমজানের শেষ দশকে মাসজিদে ইতেকাফ করতেন বিশেষ কারণে এক বছর ইতেকাফ ছুটে যাওয়ায় পরের বছর তিনি বিশ দিন ইতেকাফ করেছেন-
ইতেকাফ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা’য়ালা বলেন, “আর যখন তুমি মাসজিদে ইতেকাফ রত থাকো।” (সূরা আল-বাকারা:২/১৮৭)

ইতেকাফ আরবী শব্দ যার শাব্দিক অর্থ-আটকে থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা, নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে ইবাদত বন্দেগী করা। অর্থাৎ দুনিয়ার সকল চিন্তাভাবনা, সংসার, ব্যবসা, কাজকর্ম পরিত্যাগ করে মসজিদের নির্দিষ্ট জায়গায়, নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করাকে ইতেকাফ বলে।

মহিলারা ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় ইতেকাফ করতে পারে।
সূতরাং আল্লাহর একান্ত প্রেম-ভালোবাসা, অনাবিল শান্তি আর সন্তুষ্টি অর্জন করতে কদরের রাত্রিগুলো ইতেকাফ করে কাটানোর এক মোক্ষম সময়।

বান্দা তার আকুতি-মিনতি, দুঃখ-বেদনা, চাওয়া-পাওয়া, নিভৃতে নির্জনে সিজদায় পড়ে মনের কথা তার রবকে চুপেচুপে মন খুলে বলার এক অনাবিল সুযোগ রয়েছে ইতেকাফরত কদরের রাতগুলো।

আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা’য়ালা যেন আমাদের সবাইকে তাঁর ইবাদত বন্দেগী করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে চিত্ত প্রশান্ত করার তাওফিক দান করেন। আ-মীন।

(বিশিষ্ট লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব)

২৬ রমজান, ৬ এপ্রিল ২০২৪

আরো দেখুনঃ