পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত মুজিব, ১৭ বছর ধরে থাকেন জঙ্গলেন খুপড়িতে
দেবীদ্বার প্রতিনিধি।।
বিশাল এক জঙ্গলের ঝোপ-বাঁশঝাড় পেড়িয়ে মধ্যভাগে পলিথিনে মোড়ানো একটি ছোট খুুপড়িতে বসে আছেন ৬০ বছর বয়সী চিরকুমার মুজিবুর রহমান। গেলো ১৭ বছর ধরে জঙ্গলে খুপড়িতে শিয়াল, সাপ, বিচ্ছুসহ জীবজন্তুর সাথে অর্ধাহার-অনাহারে বসবাস করছেন সে।
রোববার দুপুরে দেবীদ্বার মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া মৌলভী বাড়ির পাশে একটি জঙ্গলে গিয়ে মিলেছে এই চিরকুমারের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ-বিত্তে সাঝানো সংসার সৎ ভাইদের রোষানলে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় তাকে জঙ্গলেই ঠাঁই নিতে হয়েছে। জঙ্গলের খুপড়িতে থাকায় বিয়েটাও করতে পারেননি সে।
গণমাধ্যম কর্মীদের ডাকে খুপড়ি থেকে বেড়িয়ে আসেন এই চিরকুমার। কান্নাবিজড়িত কন্ঠে শোনালেন খুপড়িতে বসবাস করার জীবনের গল্প। সে জানায়, তার বাবা মরহুম লাল মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে, এ সংসারে মায়ের এক মাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। প্রথম সংসারে ২ ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সংসারে মো. মুজিবুর রহমান। তার বাবা লাল মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎ ভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। মুজিবুর কাইচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে সৎ ভাই জহিরুল ইসলামকে বিএ পাশ করান। সেই জহিরুল ইসলামই তার পৈত্রিক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নেয়। তাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেয়। স্থানীয়দের সহযোগীতায় ২০০৭ সাল থেকে জঙ্গলে খুপড়ি বানিয়ে ঠাই নেই। বিয়ে করে বৌ রাখার ঘর নেই, তাই বিয়েটাও করতে পারিনি। মিলের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে ইলেক্ট্রিক লাইনের কাজ শুরু করি, বাম চোখটিও নষ্ট হয় গেছে। বয়স হয়েছে এখন কাজে নিতে চায়না কেউ। অর্ধাহার, অনাহারে রোদ, ঝর-বাদলে, শেয়ালের হাক-ডাকের মাঝেই খুপড়ির মধ্যেই থাকি। কখনো লাকরির চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ করে লবন মরিচ দিয়ে খাই, কখনো শুকনা খাবার খেয়ে থাকি। তিনি দুঃখ করে আরো বলেন,- শিয়াল-শাপ-বিচ্ছু-মশা আমার ক্ষতি করেনাই- মানুষ যা করেছে
এ ব্যপারে মুজিবুরের ভাই জহিরুলকে পাওয়া যায়নি। জহিুলের বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন জানান, আমার কাকা অভিমানী, আমার দাদার জায়গা জমি ভাগ হয়নি এখনো, তবে চাচা কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছে। চাচার পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নাই।
১০নং গুনাইঘর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি, বিভিন্ন মাধ্যমে অবগত হয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, মজিবুর রহমানকে তার পিতার জমির কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ডের সাথে দেখা করার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তার পাওনা জমি তাকে উদ্ধার করে দেওয়া হবে। না হয় আবাসনের ব্যবস্থা করে দেব।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উঃ) জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষনিক চক্ষু চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং স্বচ্ছলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ^াস দেন।
এফআর/অননিউজ