দেবীদ্বারে শিক্ষকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা
আল-আমিন কিবরিয়া।।
কুমিল্লা দেবীদ্বারের ৬১নং এলাহাবাদ পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. বেলাল হোসেনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছাত্র-ছাত্রী, বাদ যায়নি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। সোমবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক বেলালের বাড়ি এই গ্রামে। বিগত বছরগুলোতে এলাকাবাসী ভয়ে কিছু বলেনি।
গত রোববার এলাহাবাদ পূর্ব পাড়ার সুলতান আহামদের মেয়ে ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা আক্তার(১০)কে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে এই শিক্ষক। এতে ক্ষিপ্ত হয় এলাকাবাসী।
এ ঘটনাসহ গত ৫ বছরে একাদিক শিক্ষিকা-শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগে আজ সোমবার সকালে ওই শিক্ষক’কে বিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় বন্ধ ছিল ওই বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম। আতঙ্কিত কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা।
আহত শিক্ষার্থীর বড় ভাই রোবেল হোসেন জানায়, বোনকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি এনেছি। একটু পর আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এলাহাবাদ পূর্ব পাড়ার শাহ জালালসহ আরও চার-পাঁচ জন জানায়, শিক্ষক বেলালের নিজ বাড়ি বিদ্যালয়ের অতি নিকটে। এজন্যে এই বিদ্যালয়ে চলে তার একক আধিপত্য। আমরা এই শিক্ষককে এই বিদ্যালয় দেখতে চাই না।
বিগত বছরগুলোতে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্যালয় ছাড়তে হয়েছে। বর্তমানেও এই শিক্ষকের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পায় না। এই শিক্ষকের কারণে আমাদের এই এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে৷ আমরা তার বহিষ্কার চাই।
নাম না প্রকাশের শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানায়, বেলাল স্যারের চরিত্র খুবই বাজে প্রকৃতির। উনার যখন মন চায় স্কুলে আসে আবার চলে যায়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠেছিল। কয়েকবার বিচার হয়েছিল। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে বিগত দিনে সে বেঁচে গেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক বেলাল হোসেনে’কে বাড়িতে গিয়ে না পাওয়ায় ব্যবহৃত মুঠো ফোনে একাধিক বার কল করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেন জানায়, আমি এখানে যোগদান করেছি বেশিদিন হয়নি। বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলার কোনো আইন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নীতিমালায় নেই। আমরা ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি।
ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানায়, এ বিষয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ কিছু জানায়নি। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মারফতে বিষয়টা জেনেছি।
উপজেলার সহকারি শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান জানায়, তদন্তের জন্য আমরা ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছি। শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্র-ছাত্রী ও আহত ওই ছাত্রীর লিখিত বক্তব্য এনেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানায়, এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। সময় সাপেক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
দেবীদ্বার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানায়, অবরুদ্ধ শিক্ষককে পুলিশ উদ্ধার করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।