নড়াইলে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৫২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত
নড়াইল প্রতিনিধি।।
স্বাধীনতার সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী জন্মস্থান নড়াইলে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিলো কোরআন খানী, শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার, ব জীবনী ও কমের ওপর আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগীতা, দোয়া মাহফিল ও দুঃস্থ ও অসহায়দের মাঝে তবারক বিতরণ।
বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাষ্টের উদ্যোগে নূর মোহাম্মদ নগরে একটি শোক র্যালি বের হয়। র্যালিটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নূর মোহাম্মদ স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়। পরে স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন নড়াইল জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বীশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয় বিভিন্ন সংগঠন। শ্রদ্ধাঞ্জলী শেষে পুলিশের একটি চৌকষ বাহিনী রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
পরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাষ্টের সদস্য সচিব ও চন্ডিবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুর রহমান ভুইয়ার সভাপতিত্বে সভায় মহান এই বীরের বীরত্বগাথা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করেন নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অ্যাপস) তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীল, বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এস,এ, মতিন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ছেলে শেখ মোঃ মোস্তফা কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রণব কান্তি, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ সরদার, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নাতীজামাই আসাদ রহমান প্রমুখ।
পরে দোয়া মাহফিল ও তবরাক বিতরণ করা হয়। এছাড়াও জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে সম্মুখযুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন। এদিন পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীকে প্রতিরোধ এবং দলীয় সঙ্গীদের জীবন ও অস্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুরে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
উল্লেখ্য, নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা, মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন । বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (বিজিবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
মহিষখোলার নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ নূর মোহাম্মদ নগর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরী নূর মোহাম্মদ নগরের উদ্বোধন করেন। জন্মভিটায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে জেলা পরিষদ। এছাড়া নূর মোহাম্মদ নগরে ‘‘বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক শেখ নূর মোহাম্মদ পাঠাগার ও স্মৃতি যাদুঘর, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এই বীরের নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে দুটি প্রতিষ্ঠানই এমপিওভূক্ত হয়েছে। এছাড়া ফেদী বাজারের পাশ দিয়ে নবগঙ্গা নদীর ওপর নূর মোহাম্মদ সেতু নির্মানাধীন রয়েছে।
এফআর/অননিউজ