লাশ রেখে গোপনে কানাডা পাড়ি দেন পারভীন, রেখে যান প্রতিশোধের বার্তা

আনলাইন ডেস্ক।।

‘আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দিয়েছে এই র‍্যাপিস্ট, ব্ল্যাকমেইলার। সে তার নিজের ইচ্ছায় আমার হাতে ধরা দিয়েছে। নিজের হাতে এই র‍্যাপিস্ট, ব্লাকমেইলারকে মেরে শান্তি নিলাম।’

গত শনিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ‘স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট’ থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের পাশ থেকে এই চিরকুটটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম আরিফুল ইসলাম (২৭)। তিনি গত ১৭ মে পারভীন আক্তার (৩৩) নামে এক নারীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ওই অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছিলেন। পারভীন আক্তার কানাডা প্রবাসী। তাঁর বাড়িও নরসিংদীর মনোহরদী।

পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, পারভীন আক্তার ওই যুবকের লাশ রেখে কানাডায় পালিয়ে গেছেন। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

পুলিশ জানিয়েছে, আরিফুল ও পারভীন পূর্ব পরিচিত। দুজনে ওই অ্যাপার্টমেন্টে গত ১৭ মে বিকেল ৪টায় ওঠেন। পরদিন সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে পারভীন একাই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান।

পুলিশের ধারণা, ১৭ মে রাতের কোনো এক সময় আরিফকে হত্যা করে থাকতে পারেন পারভীন। এরপর সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে কুয়েত এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে কানাডা চলে যান। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি–ব্লকের সাফায়েত সড়কের ১ /এফ বাড়িটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট হিসেবে পরিচালনা করে আসছে মাটি প্রপার্টিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ভবনটিতে থিয়েটার হল, ছোট ছোট বেশ কয়েকটি কক্ষ, রেস্ট রুম, বিনোদন রুম, রেস্টুরেন্ট, সুইমিংপুল রয়েছে। এখানে দেশি বিদেশি মানুষ অবসর যাপনের জন্য আসেন।

গত ১৭ মে আরিফুল ইসলাম ও পারভীন আক্তার স্বামী–স্ত্রী পরিচয়ে দোতলার একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন। অনলাইনে সাত দিনের জন্য বুকিং দিয়েছিলেন আরিফুল। তাঁরা ওঠার ১৪ দিন পর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে মাটি প্রপার্টিজ থেকে ভাটারা থানায় ফোন কল করে জানানো হয়, দোতলার ফ্ল্যাটে একজনের লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গলা ও বুক কাটা, পচা–গলা লাশ পায়। প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

এই ঘটনায় রোববার (২ জুন) আরিফের বড়বোন সাফরিজা আক্তার রেলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় পারভীন আক্তার, তাঁর কানাডা প্রবাসী স্বামী নাজমুল ইসলাম বাবু (৩৩), মাটি প্রোপার্টিজের মালিক, ম্যানেজার, কর্মচারীসহ অজ্ঞাত আরও কয়েক জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত নাজমুল ও পারভীনের বাড়িও নরসিংদী।

রাজধানীতে নারীকে নিয়ে ফ্ল্যাটে, ১৫ দিন পর মিলল যুবকের লাশ ও চিরকুট রাজধানীতে নারীকে নিয়ে ফ্ল্যাটে, ১৫ দিন পর মিলল যুবকের লাশ ও চিরকুট
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, লাশ উদ্ধারের পর সিআইডি ক্রাইমসিন আলামত সংগ্রহ করেছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, পারভীন আক্তার গোপনে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর নোটারি পাবলিক করে আরিফুল ইসলামকে বিয়ে করেন। এরপর স্বামীর সঙ্গে কানাডায় চলে যান। আরিফুল চলে যান জাপানে। সেখানে নাচুকি নামে এক জাপানি তরুণীকে বিয়ে করেন। এতে পারভীন আক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময় হুমকি দিতেন। পারভীন ও তাঁর স্বামী পরিকল্পনা করে জাপান থেকে ঢাকায় এনে আরিফকে খুন করেছেন।

এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, গত ৩১ মে রাত সোয়া ৮টার দিকে আরিফুলের জাপানি স্ত্রী বাদীকে ফোন কল দিয়ে জানান, গত ১৭ মে আরিফ ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে তাঁকে ফোনে পাচ্ছেন না। এরপর আরিফকে তাঁর পরিবার থেকেও ফোন করা হয়। কিন্তু নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

আরিফের বোন সাফরিজা আক্তার রেলি বলেন, পারভীন ও তাঁর স্বামী এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। পারভীন এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঠান্ডা মাথায় ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, আরিফুল গোপনে দেশে আসেন। পরিবারের কেউ জানতেন না। এরপর পুরোনো বান্ধবী পারভিন আক্তারকে নিয়ে তিনি বসুন্ধরার স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট ওঠেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেছে তাঁদের অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশের দৃশ্য ধরা পড়েছে। পারভীনের মোবাইল নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান ছিল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা। ইমিগ্রেশন পুলিশের তথ্য বলছে, গত ১৮ মে পারভীন দেশ ছেড়ে কানাডা চলে গেছেন।

আরিফুলের লাশের পাশ থেকে চিরকুট ছাড়াও একটি নোটারি উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, আরিফ এবং পারভীন ২০২১ সালে নোটারি পাবলিক করে বিয়ে করেন। সেখানে পারভীন ও আরিফের স্বাক্ষর রয়েছে।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, অভিযুক্ত পারভীন ১৮ মে সকালে পালিয়ে কানাডা গেছেন। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24

আরো দেখুনঃ