গিরিবালার সৌন্দর্য অবলোকন করতে বান্দরবানে সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:

কবি সাহিত্যিকেরা বলে গেছেন, যদি কখনো মনের ব্যামো হয়, তাহলে আবহাওয়ার বদল করতে হয়। সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাহিত্যের অঙ্গনে ছেলেমেয়েরা কবি সাহিত্যিকদের দেয়া সেই প্রেসক্রিপশনই অনুসরণ করলেন। তাইতো তারা নিয়মিত ক্লাস, এসাইনমেন্ট, পরীক্ষার একঘেয়েমি থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার জন্য বান্দরবানের প্রকৃতি থেকে ঢু মেরে আসলো।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ রাতে প্রকৃতির অনন্য নিদর্শন বান্দরবানের এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষাসফরের শুভকামনা এবং সাময়িক বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আলী হোসেন চৌধুরী।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোরে শিক্ষাসফরের বাসটি বান্দরবান পৌঁছায়। সেখান তারা অপরূপ সৌন্দর্যে বেষ্টিত মেঘবাড়ি রিসোর্টে অবস্থান নেন। পাহাড় ঘেরা সবুজ মেঘের রাজ্যে সবাই মিলে একসাথে তাদের সকালের নাস্তা শেষ করেই তারা বেড়িয়ে পড়েন প্রকৃতির টানে। চাঁদের গাড়িতে করে পাহাড়ের বুক চিড়ে তারা ছুটে চলে নীলগিরি আর নীলাচলের দিকে। পথিমধ্যে তারা বিভিন্ন ঝর্ণা, এবং পাহাড়ী ছড়ার মায়াবী সৌন্দর্য উপভোগ করে। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর কথা মাথায় রেখেই “considers man and nature as essentially adapted to each other, and the mind of man as naturally the mirror of the fairest and most interesting properties of nature.” তারা গিরিবালার সৌন্দর্য অবলোকন করেছেন, সেখানকার ইতিহাস আর সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। শুধু পাহাড় দেখেই তারা তৃপ্ত হয়নি, ফিরতি পথে তারা সমুদ্র সৈকতে (পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত) তাদের পদচিহ্ন এঁকে দিয়ে এসেছে।
বিভাগের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, ইংরেজি বিভাগের ছাত্রদের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি গভীর টান থাকে এবং প্রকৃতির ভালবাসা তাদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করতে এ শিক্ষা সফর আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বান্দরবান বাংলাদেশের একটি অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। মহান আল্লাহর শৈল্পিক সৃষ্টি পাহাড় আমদের দেশকে আরো বেশি আবেদনময়ী করেছে। আমরা বান্দরবান কে মালশিয়ার গেনতিং হাইলেন্দ (Ganting Highland) এর সাথে তুলনা করতে পারি। বাংলাদেশের টুরিজম সেকটরে অনেক উন্নয়ন সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের সরকার এবং ব্যবসায়ীরা এক হয়ে কাজ করলে এ সেক্টরে অনেক বেশি উন্নয়ন সম্ভব।
শিক্ষাসফরের অনুভূতি জানাতে গিয়ে ইংরেজি বিভাগ এর প্রভাষক মো নূরুল আমীন বলেন সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ এর স্টাডি ট্যুর বড় পরিসরে এই প্রথম, এর পূর্বে কেন্দ্রীয় ভাবে অংশ নিত সব ডিপার্টমেন্ট এর সাথে। ২০২৫ এ সবাইকে পথ দেখাল কিভাবে এককভাবে সুন্দর করে টুর করা যায়। পাহাড়ি পরিবেশে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে অসাধারন সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন উম্মে খাদিজা ঊষা খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে তার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে বলেন, ব্যাক্তিগত ভাবে পাহাড় আমার ভিষণ পছন্দ। বান্দারবান শিক্ষা সফর একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, পাহাড়, ঝর্ণা এবং স্থানীয় জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছিলাম।এখানকার পরিবেশের সাথে মিশে গিয়ে, নতুন ধারণা এবং দৃশ্য ধারণ করতে পেরেছি, যা জীবনের জন্য খুবই মূল্যবান। এছাড়াও, দলবদ্ধভাবে সফরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একতা, সহযোগিতা এবং বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, যা ভবিষ্যতে আমাদের সামাজিক ও পেশাগত জীবনে উপকারী হতে পারে।
শিক্ষা সফর আয়োজক কমিটির আহবায়ক খাইরুল মেহেদী বলেন, শীতের কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির আমেজ নিতে আমাদের ছুটে যাওয়া বান্দরবানের ওই দূর পাহাড়ে। শীতের সকালের কুয়াশাচ্ছন্ন শহর আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য যেন প্রস্তুত হয়েই ছিল । আমরা বান্দরবান এ বিভিন্ন স্পট যেমন শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি, চিম্বুক, ডাবলহ্যান্ড ভিউ, নীলগিরি উপভোগ করার সুযোগ হয়। পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ সবকিছু মিলিয়ে অমায়িক সৌন্দর্যের আধার বান্দরবান। নিজ শহর কুমিল্লায় চলে আসার পরেও এখনো মন পড়ে আছে পাহাড়েই। সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের শিক্ষার সফরটিকে যেভাবে আনন্দঘন করে তুলেছিল তার জন্য সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে এই শিক্ষা সফর কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব দিয়ে এত সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞ জ্ঞাপন করছি।