বৈষম্যহীন ডিজাইন ছড়িয়ে দিতে চান তুর্কি তরুণী

অনলাইন ডেস্ক। ।

তুর্কি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন ডিজাইনার সব রকম মানুষের জন্য পোশাক তৈরি করে চলেছেন৷ বৈষম্যহীন এক মুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখছেন তিনি৷ তবে তুরস্কে কাজ করতে গিয়ে তাকে কিছু বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷

তুর্কি বংশোদ্ভূত মার্কিন ডিজাইনার এডা ইয়োরুলমাসোলু ইস্তানবুল শহরের কুইয়ার বা বিপরীতকামী মানুষদের জন্য তার নতুন কালেকশন তুলে ধরছেন৷ ড্র্যাগ কুইন, পোল ডান্সার ও ডিজে-দের এক শো-তে স্বপ্নময় পোশাক দেখা গেছে৷ এডা বলেন, আমার আদর্শ জগতে কোনো ধর্ম, ত্বকের রং, লিঙ্গ, শরীরের নিখুঁত গঠন নেই৷ আপনার পাঁচটা হাত থাকলেও চলবে৷ নিতম্বে দশটা চোখ থাকলেও অসাধারণ! কেমন দেখতে বা কোথা থেকে এসেছে, তার ভিত্তিতে কাউকে বিচার করা হোক, আমি সেটা চাই না৷

এডা কাকতালীয়ভাবে ড্র্যাগ কুইনদের জগতে পা রেখেছিলেন৷ তার জন্ম আমেরিকায়, সেখানেই বড় হয়েছেন৷ ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষার সময়ে তিনি শিকাগো শহরে ড্র্যাগ কুইনদের জন্য পোশাক তৈরির আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন৷ সেই কাজে সাফল্য দেখিয়ে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন৷ এডা বলেন, ড্র্যাগ কুইনদের বহুমুখী প্রতিভা আমাকে মুগ্ধ করে৷ তারা নখ, মেকআপ, চুল, ফ্যাশন, পারফরমেন্স– সব বিষয়ে পারদর্শী৷ আমার সঙ্গে তারা বাধাহীনভাবে কাজ করেন বলে আমিও তাদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসি৷ তাদের পরণে আমার তৈরি পোশাক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে৷

ইস্তানবুলে নিজের স্টুডিও-তে ‘এডা বার্থিং’ ছদ্মনামে পরিচিত এই ডিজাইনার আজকের ফ্যাশন শো-র কাজে মেতে উঠেছেন৷ ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে তিনি ইস্তানবুলে আটকে পড়েছিলেন৷ তখনই তিনি পাকাপাকিভাবে তুরস্কে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এডা ইয়োরুলমাসোলু বলেন, আমার মধ্যে পরিবর্তনের তাগিদ জন্মেছিল৷ সারা জীবন শিকাগোয় কাটিয়েছি, নিউ ইয়র্ক বা লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যাবার কথা ভাবিনি৷ শুরু থেকেই জানতাম, শিকাগোর পর ইস্তানবুলই সেরা জায়গা৷ প্রতিটা দিনই এক অ্যাডভেঞ্চারের মতো৷ একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়৷ আমার সেটা ভালোই লাগে৷

এডা শুধু অন্যদের জন্য পোশাক তৈরি করেন না, তথাকথিত ‘মাদার ক্রিচার’ হিসেবে তিনি মঞ্চে নিজের শো-তেও উপস্থিত থাকেন৷ এখনো পর্যন্ত তিনি দুইশোরও বেশি কস্টিউম ও ক্রিচার সৃষ্টি করেছেন৷ তবে ইস্তানবুল শহরে তার সৃজনশীলতায় রাশ টানতে হয়, অতীতে যার প্রয়োজন হয়নি৷ এডা বলেন, কিছু চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে আমার কখনো তুরস্কে নিজেকে সীমাবদ্ধ মনে হয়৷ আমেরিকায় থাকতে আমি আরও স্বাধীনভাবে কোনো ক্রিচার হিসেবে বা নিজের তৈরি পোশাক পরে বের হতে পারতাম৷ আর এখানে কখনো নিরাপত্তা বা স্বস্তির অভাব বোধ করি৷ সেই সীমা ভাঙার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছি বটে, তবে তার জন্য হয়তো আরো সময় লাগবে৷

এডার নতুন কালেকশন দর্শকদের মধ্যে বিপুল সাড়া তুলেছে৷ এডা ইয়োরুলমাসোলু বলেন, ভবিষ্যতে তুরস্কে বিপরীতকামী কমিউনিটির পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে বলে আমার বিশ্বাস৷ কখনো এগোচ্ছে, কখনো পেছোচ্ছে বলে এখনই সেটা বলা কঠিন৷ তবে উন্নতির আশা আঁকড়ে ধরা আমার জন্য জরুরি৷ সবকিছু আরো ভালো হবে এবং আমরা যতটা সম্ভব এগিয়ে যাবার চেষ্টা করবো৷

এডা ইয়োরুলমাসোলুর সৃষ্টিকর্ম সবাইকে শামিল করে এক অসাধারণ জগত সৃষ্টি করে চলেছে৷

ফরহাদ/অননিউজ

আরো দেখুনঃ