শুল্ককর বৃদ্ধি: বাংলাবান্ধাবন্দরে ৮ দিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি।।
সরকারি ভাবে স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ পাথর আমদানিতে শুল্ককর বৃদ্ধির করায় গত ৮ দিন ধরে দেশের সড়ক পথের একমাত্র চারদেশিয় স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধাবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।
গত মঙ্গলবার থেকে মঙ্গলবার (১ থেকে ৮ আগস্ট) পর্যন্ত এই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে পুরো বন্দর এলাকা জুড়ে। পাথর প্রবেশ না করায় বর্তমানে স্থলবন্দর ইয়ার্ডেও শুনসান নিরবতা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, বাংলাদেশ স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ পাথর আমদানিতে শুল্ককর বৃদ্ধি করায় পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে বন্দরের ব্যবসায়ীরা। এই বন্দরটি পাথর নির্ভরশীল হওয়ায় গত ৮ দিন ধরে কর্মহীন অবস্থান দিন যাপন করছে ব্যবসায়ী ও কয়েক হাজার শ্রমিক।
আরো জানা যায়, বাড়তি শুল্ককর প্রত্যাহারের না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি থেকে পিছু হেটেছে ব্যবসায়ী ও সিএনএফ সদস্যরা।
পাথর ব্যবসায়ী রাজু বলেন, সরকারিভাবে রাজস্ব ফি বাড়ানোর কারণে আমাদের পাথর আমদানিতে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই এই লোকসান মেনে নিতে না পেরে পাথর আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা গত ৮ দিন ধরে বন্ধ রেখেছে বন্দরের পাথর আমদানি। হাফিজুর রহমান নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ভারত ও ভূটানের মাঝে স্লট বুকিং ফি বাবদ চলা দ্বন্দ্বে পাথর আমদানি প্রায় ১ মাস ধরে বন্ধ থাকার পর গত মাসের শেষের দিকে আবারো ভারত থেকে আমদানি শুরু হয়। এরি মাঝে শুল্ককর বৃদ্ধিতে আবারো প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরটি।
স্থলবন্দরের পাথর ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা জানান, বাংলাদেশ কাস্টমস বিদেশী পণ্য আমদানির ক্ষেতে প্রতি টনে ১৩ ডলার নির্ধারণ করায় ব্যবসায়ীদের পূর্বের তুলনায় ৫০ টাকা হারে বেশি রাজস্ব দিতে হবে। এই হারে রাজস্ব বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হবে। ফলে ব্যবসায়ীরা বাড়তি শুল্ক হার প্রত্যাহারে দাবিতে ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন।
নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় বন্দরটির প্রতি নজর দেয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শ্রমিকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষাসহ বন্দরটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শ্রমিক নেতারা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, বন্দরটিতে দিন দিন নতুন নতুন সমস্যায় বিপাকে পড়েছে আমাদের বন্দরের শ্রমিকরা। তারা এই বন্দরে কাজ করে দিন অতিবাহীত করে। যদি সমস্যা দ্রুত সমাধান না হয় তবে শ্রমিকদের বড় ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, পূর্বে আমদানিতে টন প্রতি ১২ ডলার এসএস মেন্ট গ্রহণ করা হলেও, নতুন করে সরকারি নির্দেশে গত ১ আগস্ট থেকে পার টনে ভেলু ১ ডলার বৃদ্ধি করে ১৩ ডলার করা হয়েছে। এতে করে ভ্যাটের পরিমাণ বেড়ে ৪১ টাকায় দাড়িয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি রফতানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খুদা মিলন বলেন, গত ১ আগস্ট থেকে শুল্ক বিভাগ এসএসমেন্ট কর ১ ডলার বাড়ানোর কারণে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। শুধু বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর না, একই অবস্থা শুরু হয়েছে অন্যান্য স্থলবন্দরে। আমরা সকল বন্দর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাদের নিয়ে এ বিষয়ে শুল্ক বিভাগের সাথে দ্রুত আলোচনা করবো।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই বন্দরটি পাথর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। তবে চলমান সমস্যায় চলতি অর্থবছরের যে লক্ষ মাত্র রয়েছে তা থেকে পিছিয়ে পড়ছে সরকার। আশাকরি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে।
এফআর/অননিউজ