সোনাগাজীতে যৌতুক না পেয়ে অন্ত:স্বত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী)
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় যৌতুক না পেয়ে অন্ত:স্বত্ত্বা স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী সালাউদ্দিন সেলিমকে (৩৮) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ওসমান হায়দার এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলার অন্য দুই আসামি গৃহবধূর শ্বশুর মো. সোলায়মান ও ননদ সুলতানা আক্তারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় স্বামী সালাউদ্দিন অনুপস্থিত ছিলেন। তবে শ্বশুর ও ননদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ বলেন, ঘটনার পর থেকে আসামি সালাউদ্দিন পলাতক। তাকে গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের পরে রায় কার্যকর করা হবে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামের সালাউদ্দিনের সঙ্গে একই উপজেলার চর সোনাপুর গ্রামের মো. শহীদুল্লাহর মেয়ে খাদিজা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সালাউদ্দিন ও তার স্বজনেরা বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য খাদিজাকে নির্যাতন করতেন। পরে বিদেশে যাওয়ার জন্য গৃহবধূ খাদিজার পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন সালাউদ্দিন। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বামী সালাউদ্দিন খাদিজাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেন। তাকে উদ্ধার করে ফেনী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় খাদিজার ভাই মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় স্বামী সালাউদ্দিন ছাড়াও তার বাবা মো. সোলায়মান, মা হাজেরা খাতুন, ভাই সেন্টু, জিয়া ও বোন সুলতানা আক্তারকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন এসআই শ্রীবাস চন্দ্র দাস ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে স্বামী সালাউদ্দিন, শ্বশুর সোলায়মান ও ননদ সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর বিচারকাজ শুরু হয়। মামলায় মোট ১৮ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারক ওসমান হায়দার আসামি সালাউদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অন্যদিকে সোলায়মান, সুলতানা আক্তারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, খাদিজা-সালাউদ্দিন দম্পতির রিফাত হোসেন নামের একটি ছেলে সন্তান আছে। মৃত্যুর সময় গৃহবধূ খাদিজা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে।