সোনারগাঁয়ে পুলিশ নির্যাতনে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ দুই পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ
স্টাফ রিপোর্টার।।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আসামি ধরতে গিয়ে নির্যাতন করে নূরুল ইসলাম নামের এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
গতকাল সোমবার দুপুরে জামপুর ইউনিয়নের বুরুমদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নুরুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত ফালু মিয়ার ছেলে। নুরুল ইসলামকে আড়াইহাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর তালতলা ফাঁড়ি পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইলিয়াস আহমেদ ও একজন কনস্টেবলকে একটি কক্ষে আটক করে রাখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে দীর্ঘ ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন ও সোনারগাঁ থানার ওসি মাহাবুব আলম তাদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে ছাড়িয়ে নেন। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নুরুল ইসলামের মৃত্যুর সংবাদে উৎসুক জনতা সন্ধ্যার পর থেকে ওই বাড়িতে ভীড় করেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যুতে আজহারি করতে দেখা যায়।
তবে পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তি একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার বাড়িতে গাঁজা উদ্ধারের অভিযানে যান। সেখানে পুলিশ দেখে ওই মাদক ব্যবসায়ী স্টোক করে মারা যান।
নিহতের ছোট মেয়ে মিথিলা আক্তার জানান, তার বাবা একজন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ছিলেন। গত তিন বছর আগে ওপেন হার্ট সার্জারী হওয়ার কারনে বাড়িতে বেকার অবস্থায় রয়েছেন। তারা ৫ বোন। তার কোন ভাই নেই। ফলে তার বাবা মায়ের সংসারের খরচ নির্বাহ করেন বোনেরা। গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে তালতলা ফাঁড়ি পুলিশের এএসআই ইলিয়াস আহমেদ ও আরো একজন পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে ঘরে প্রবেশ করেন। এক পর্যায়ে তার বাবার হাতে হাতকড়া পরিয়ে একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে রাখে পুলিশ সদস্যরা। সেখানে তার বাবার সঙ্গে তাদের ধস্তাাধস্তি হয়। তারা তার বাবাকে কিল ঘুষি, লাথি ও তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আঘাত করে। পরে তাকে ছেড়ে দিতে এক লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না পেলে চলমান রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়। পুলিশ সদস্যের দাবির ৫০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার পর ওই কক্ষে গিয়ে তার বাবাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। সেই সময়ে কোন শ্বাস প্রশ্বাস ছিল না। পরে তাকে পাশ্ববর্তী আড়াইহাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
মিথিলা আক্তার দাবি করেন, তার বাবাকে হাতকড়া পরিয়ে রাখাবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তবে তিনি পানি পান করা ও ইনহেলার ব্যবহার করতে চেয়েছেন। পুলিশ এগুলো ব্যবহার করতে দেননি। পুলিশ নির্যাতনে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের আরেক মেয়ে শিলা জানান, তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। তার বাবার হত্যাকান্ডের জন্য বিচার দাবি করেন। তার বাবার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তিনি কোন রাজনীতি করেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের কয়েকজন জানান, নিহত নুরুল ইসলাম একজন মাদক ব্যবসায়ী। অসুস্থ হওয়ার পর কিছুটা এ ব্যবসা থেকে সড়ে আসলেও পুরোপুরি এ ব্যবসা ছাড়তে পারেননি। পুলিশের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। নিয়মিত পুলিশ তার কাছ থেকে মাসোহারা নিতেন। আজ মাসোহারা নিতে এসে এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, নিহত ব্যক্তি একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। তার জানামতে একাধিকবার পুলিশ তাকে গাঁজাসহ আটক করেছে। জানতে পারলাম আজও তাকে আটক করতে এসেছেন।
তালতলা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করতে আসলে পুলিশ দেখে তিনি স্টোক করে মারা যান। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, পুলিশ নির্যাতনে হত্যার ঘটনা সত্য নয়। মাদক বিরোধী অভিযানে মাদক না পেয়ে পুলিশ চলে আসার পর ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে পুনরায় ওই বাড়িতে যান পুলিশ সদস্যরা। তবে তাদের অবরুদ্ধ রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এফআর/অননিউজ