হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পেয়াজে গজাচ্ছে গাছ, বিপাকে ব্যবসায়ীরা
সালাহউদ্দিন বকুল, হিলি প্রতিনিধি।।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেয়াজের আমদানি অব্যাহত থাকলেও ক্রেতা সংকটের কারনে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা।চুক্তিবদ্ধ পেয়াজ না দেওয়ায় ও পেয়াজে গাছ গজায় পেয়াজ কিনতে চাচ্ছেনা পাইকারগন।নতুন করে পেয়াজের শুল্ক বাড়ার কারনে পেয়াজ আমদানি করে লোকশানে পড়েছেন বন্দরের আমদানিকারকরা।
হিলি স্থলবন্দরের পেয়াজ ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, মেহেরপুর, পাবনা অঞ্চলের মুড়িকাটা পেয়াজ উঠে গেছে যার কারনে দেশের বাজারে এখন দেশীয় পেয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এছাড়াও এই পেয়াজের মান ভালো থাকায় বাজারে চাহীদা রয়েছে।একইসাথে বার্মা থেকেও পেয়াজ আসার ফলে চাহীদা কমেছে ভারতীয় পেয়াজের। যার কারনে ভারতীয় পেয়াজের সেভাবে পড়তা হবেনা একারনে আমাদের ব্যবসায়ীদের এখন একটু সমস্যা।তারপরেও ভারত থেকে যেদামে পেয়াজ আমদানি করা হচ্ছে পেয়াজে যদি গাছ না বের হতো তাহলে পেয়াজের মান ভালো থাকতো তাহলে এই পেয়াজ বিক্রি করে কিছুটা লাভ হতো। এরপরেও আমরা যে পেয়াজ চেয়েছি তাদের নিকট থেকে বা যেটি তারা দেখিয়েছে সেই পেয়াজ তারা পাঠাইনি পেয়াজ দিয়ে দিছে ছোট সাইজের আবার সেই পেয়াজের গাছ বেরুচ্ছে আবার কাচা ভিতরে ঘেমে যাচ্ছে যার কারনে এই পেয়াজ কেউ নিতে চাইছেনা।এজন্য আমরা ব্যবসায়ীরা পেয়াজ আমদানি করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
হিলি স্থলবন্দরের পেয়াজ ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বন্দর দিয়ে যে পেয়াজ আমদানি হচ্ছে এই পেয়াজ অতিরিক্ত শীতের কারনে ও পেয়াজে অতিরিক্ত ময়েশ্চার থাকার কারনে পেয়াজে গাছ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে বাহির থেকে যারা পেয়াজ কিনতে আসছে দাম কম হলেও তারা কেউ এসব পেয়াজ কিনতে চাচ্ছেনা। এতে করে আমরা যারা পেয়াজ ব্যবসায়ী রয়েছি তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
হিলি স্থলবন্দরের পেয়াজ ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা বর্তমানে পেয়াজ আমদানি করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ছি। একেতো পেয়াজ কাচা, তারপরে পেয়াজ ঘেমে যাচ্ছে পেয়াজে গাছ বের হচ্ছে। এর উপর ১জানুয়ারি থেকে পেয়াজের আমদানি শুল্ক ৫ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১০ভাগ নির্ধারন করেছে সরকার। যার কারনে পেয়াজ আমদানি করে আমাদের পড়তা নেই আমরা পেয়াজ আমদানি করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।বর্তমানে বন্দরে ইন্দোর জাতের পুরানো পেয়াজ ১৮/২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ইন্দোর জাতের নতুন ছোট পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫/২৬টাকা অথচ এই পেয়াজ আমাদের পড়তা ৩০টাকার উপরে।আর ইন্দোর জাতের নতুন মোটা পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬/৩৭টাকা।এছাড়া নাসিক জাতের পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪১/৪২টাকা করে।
হিলি স্থলবন্দরে পেয়াজ কিনতে আসা পাইকার আব্দুল গফুর বলেন, দেশে পেয়াজের চাহীদা রয়েছে কিন্তু বর্তমানে বন্দর দিয়ে যেসব পেয়াজ আমদানি হচ্ছে সেই পেয়াজে গাছ হচ্ছে। গাছ হওয়ার কারনে আমরা পেয়াজটা ঠিকমতো কিনতে পারছিনা এতে আমরা পাইকাররা ক্ষতির মুখে পড়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন মোকামে পার্টিদের এসব পেয়াজ পছন্দ হচ্ছেনা এজন্য আমাদের সমস্যা হচ্ছে যেমন আজকে পেয়াজ কিনতে আসছি কিন্তু পছন্দ না হওয়ার কারনে কেনা হলোনা ঘুরে যাচ্ছি।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন,হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেয়াজের আমদানি অব্যাহত রয়েছে।তবে পুর্বের তুলনায় পেয়াজ আমদানির পরিমান কিছুটা কমেছে। পুর্বে যেখানে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ট্রাক পেয়াজ আমদানি হলেও এখন তা কমে ১৫/২০ট্রাকে নেমেছে কোনদিন সেই পরিমান আরো কমে ১০ট্রাকে নামছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্দর দিয়ে ১৬টি ট্রাকে ৪৪২টন পেয়াজ আমদানি হয়েছে। আজো বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আর পেয়াজ যেহেতু কাচাপন্য দ্রুত পচনশীল সেহেতু এটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুততার সহিত খালাসের সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করে রেখেছে বন্দর কতৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত,দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত পেয়াজের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত ও পেয়াজ চাষে উৎসাহিত করতে গত ২০শে ডিসেম্বর থেকে পেয়াজ আমদানির অনুমতি পত্র প্রদান স্থগিত রেখেছে সরকার। এরপরেও পুর্বের অনুমতিপত্রের মাধ্যমে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।