বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে
নড়াইল প্রতিনিধি।।
আজ ১০ অক্টোবর, বিশ^বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের এই দিনে অসুস্থ্যতাজণিত কারনে যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অগণিত শুভাকাঙ্খী ও ভক্তদের কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় নিজ বাসভবনে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে কোরআন খানী, শিল্পীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিল, সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় আর্টক্যাম্প, এসএম সুলতান শিশুস্বর্গে শিশুদের লেখা পত্র প্রদর্শনী ও পাপেট শো জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও শিল্পী এসএম সুলতানের জীবনী নিয়ে নির্মিত চলচিত্র আদম সুরত প্রদর্শনী এবং পালাগানের আয়োজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নড়াইল জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন,এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন, নড়াইল প্রেসক্লাব, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, এস,এম, সুলতান বেঙ্গল চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়, লাল বাউল সম্প্রদায়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মূর্ছনা সংগীত নিকেতন সহ সরকারি ও বে-সরকারি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পীর সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়। পরে দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে কোরআন খানির আয়োজন করা হয়।
সকাল ১০টার দিকে সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় আর্টক্যাম্প ও এসএম সুলতান শিশুস্বর্গে শিশুদের লেখা পত্র প্রদর্শনী ও পাপেট শো অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া বিকালে শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পী এসএম সুলতানের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা ও শিল্পী এসএম সুলতানের জীবনী নিয়ে নির্মিত চলচিত্র আদম সুরত প্রদর্শনী এবং পালাগানের আয়োজন করা হয়েছে।
এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, শিল্পকলা একাডেমীর চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহাবুবা করিম, উপ-পরিচালক খন্দকার রেজাউল হাশেম, স্থানীয় সরকার বিভাগ নড়াইলের উপ-পরিচালক জুলিয়া শুকায়না, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ^তী শীল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ) মোঃ জুবায়ের হোনের চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর সিদ্দিকী, সুলতানপ্রেমী সহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শিল্পী সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে নড়াইলের সাংস্কৃতিক সংগঠন এস.এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন পৃথকভাবে ১১ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। নড়াইল শহরে অবস্থিত সুলতান মঞ্চে ৪দিনব্যাপি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ ও ভারতের চিত্রশিল্পীদের নিয়ে আর্টক্যাম্প, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভা। প্রয়াত এই শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে নড়াইলের সুলতান মঞ্চ চত্বরে শতাধিক স্টল বিভিন্ন বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা ট্রেন ও নাগোরদোলা বসেছে।
এছাড়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও শিল্প সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ ও প্রসারের উদ্যেশ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসন ও এস.এম সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে নড়াইলের চিত্রা নদীতে আগামী ২৮ অক্টোবর দুপুরে নারী ও পুরুষের এস এম সুলতান নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। নড়াইল শহরের শেখ রাসেল সেতু থেকে মাছিমদিয়া এলাকায় অবস্থিত এস, এম, সুলতান সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এ নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হবে। বাইচে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। আনুমানিক অর্ধলক্ষ মানুষ নড়াইলের ঐতিহ্য এ নৌকা বাইচ উপভোগ করে থাকে।
চিত্রশিল্পের খ্যাতি হিসেবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে পদকসহ ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা সহ অসংখ্য পদকে ভূষিত হন শিল্পী এসএম সুলতান।।
এফআর/অননিউজ