ভাঙ্গা বাসিকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন এসিল্যান্ড মাহামুদুল হাসান।

ভাঙ্গা, ফরিদপুর প্রতিনিধি।।
বিদায় কথাটি বেদনা বিধুর, নয়নে অশ্রুঝরা, মন চাহে নাতো দিতে যে বিদায়, হৃদয়ে বেদনা ভরা, বিদায়ী সানাই বাজিতেছে দ্বারে, মানবিনা সেতো বাঁধা,মায়ার বাঁধনে বাঁধিয়া রাখিতে,বৃথাই অশ্রু সাধা।

একজন সরকারি কর্মকর্তার বদলীতে ভাঙ্গার সাধারন মানুষের মাঝে যে ইতিবাচক অলোচনা শুরু হয়েছে ওনাকে ঘিরে,সচারচর অনেকের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। সাধারন মানুষের মাঝে তার এ জনপ্রিয়তার কারন খুজে বের করার চেষ্টা করেছি আজকের এ প্রতিবেদনে।

যে মানুষটার বিদায়ে এত আলোচনা তিনি হলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সদ্য বিদায়ী সহকারী কমিশনার(ভূমি) মাহামুদুল হাসান । তিনি বিগত ২০২২সালের ১১ই আগস্ট ভাঙ্গা উপজেলায় সহকারী কমিশনার(ভূমি) হিসাবে যোগদান করেন। দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জনগণের অভাব-অভিযোগের শেষ নেই। তবে তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম এ কর্মকর্তা। যোগদানের পর নিজের সরকারি দপ্তরকে করে তুলেছেন জনবান্ধব এক প্রতিষ্ঠান। যেখানে ভূমি অফিস মানেই ভোগান্তি , টাকার ছড়াছড়ি; সাধারণ মানুষের হয়রানি আর অসহায়তার অভিযোগ। সেখানে ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতামূলক ও ঘুষবিহীন সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করে জনগণের আস্থা ও প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহামুদুল হাসান ।

তার যোগদানের পর থেকেই বদলাতে থাকে ভূমি অফিসের দৃশ্যপট। সেবা প্রত্যাশীরা যেন দালালের কারণে হয়রানির শিকার না হন এজন্য নিজের কক্ষে জনসাধরণের যাতায়াত নির্বিঘœ করেন। যে কোনো প্রয়োজনে সরাসরি তার কাছে আসতে শুরু করেন সেবা প্রত্যাশীরা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে হতদরিদ্র গৃহহীন পরিবারের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ প্রকল্পে কঠোর নজরদারিতে প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে খাস জমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থা করিয়েছেন।

নামজারির ৭ হাজারের বেশি আবেদনের সব কটি নিষ্পত্তি করেছেন তিনি। এ ছাড়া গত বছরের ঝুলে থাকা প্রায় ৩০০০ হাজার নামজারির আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন । নিয়মিত তদারকি ব্যবস্থা এবং সরাসরি অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত সমস্যা সমাধান করতেন তিনি। নানাবিধ কাজ কর্মে এই মানুষটি দেখিয়েছেন তার রুচি ও দক্ষতার পরিচয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় এসিল্যান্ড মাহামুদুল হাসান যেখানে চাকরি করেছেন সেইখানে আধাঁর সরিয়ে আলো ফুটিয়েছেন । এর আগে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক অফিসের এনডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । সেখানে বিভিন্ন পরিত্যক্ত জায়গার চিত্র পাল্টে দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

ভাঙ্গা উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই উপজেলা বিভিন্ন পয়েন্টে চিত্তাকর্ষক উন্নয়ন মূলক কাজ করে উপজেলাবাসীর নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। প্রথমেই তিনি তাঁর অব্যবস্থাপনার ভূমি অফিসের অবকাঠামো উন্নয়ন ও দর্শনীয় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। ভাঙ্গা উপজেলায় মাত্র ৫/৬ মাসের ব্যবধানেই উপজেলা ভূমি অফিসের দৃশ্য বদলে যায়। উপজেলা ভূমি অফিস চত্বরে গোল ঘর নির্মান,অভ্যন্তরীন রাস্তা নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর মেরামত,বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রোপন, অফিস রুম সংস্কার ও আধুনিকায়ন, রেকর্ড রুম সংস্কার এবং সংরক্ষণ কাজের মাধ্যমে অফিস’টি দৃষ্টি নন্দন ও সৌন্দর্য ময় করেছেন

চান্দ্রা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, এসিল্যান্ড মাহামুদুল হাসান ছিলেন একজন সৎ,কর্মঠ অফিসার। তিনি দিন-রাত এলাকার ও ভূমি সেবারমান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। আমি আশাবাদী তার মাঝে কাজের যে স্পৃহা আছে খুব দ্রুতই তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাবেন।

এ বিষয়ে সদ্যবিদায়ী এসিল্যান্ড মাহামুদুল হাসান বলেন, সরকারি চাকুরিজীবিদের বদলি একটা নিয়মিত রুটিন কাজ। তারই অংশ হিসেবে আমাকে মতিঝিল সার্কেলে ন্যাস্ত করেছে। আমার এ স্বল্প সময়ে আমি চেষ্টা করেছি আমার অফিসের স্টাফদের মধ্যে সেবার মানসিকতা তৈরি করার । দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা স্বচ্ছ ও দ্রæততার সাথে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও কিছু কাজ করেছি অফিসটাকে সুন্দর করার জন্য। সেবাপ্রার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কতটুকু পেরেছি তা সেবাপ্রার্থীরাই বলতে পারবেন।

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ