সোনারগাঁয়ে সংকুচিত কারুশিল্পীরা

নজরুল ইসলাম শুভ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আয়োজিত হয় কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন মাসব্যাপী এই মেলার আয়োজন করে। তবে এবার মেলার দোকান সংকুচিত কারণে অংশগ্রহণকারী কারুশিল্পীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

কারুশিল্পীরা বলছেন, প্রতিবছর একজনকে একটি দোকান বরাদ্দ দিলেও এইবার দুইজন কারুশিল্পীকে একটি দোকান দেওয়া হয়েছে। দোকানের আয়তন ছোট হওয়াতে পণ্য সাজিয়ে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে তাদের। এছাড়া অন্যান্য বছর একজন কারুশিল্পীর সাথে একজন সহযোগীর জন্যও সম্মানি (দৈনিক ৫০০ টাকা) বরাদ্দ রাখা হয়। এবার সহযোগীর সুবিধা পাচ্ছেন না শিল্পীরা।

পাটের তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে কাজ করেন রংপুরের রাশিদা বেগম। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে চলমান মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে এবারই প্রথম অংশ নিয়েছেন তিনি। প্রথমবার এসেই বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে। ছোট একটি দোকান দুই কারুশিল্পীর নামে বরাদ্দ দেওয়ায় পণ্য সাজানো ও দোকানের ভেতর কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাশিদা বেগম বলেন, ‘রংপুরে আমার একটি ছোটখাটো কারখানা আছে। আমার অধীনে সেখানে ৫০ জন কাজ করে। এইবার প্রথম এসেছি সোনারগাঁয়ের কারুশিল্প মেলায়। কিন্তু এসে তো পড়েছি সমস্যায়। পাটের তৈরি অনেক জিনিসপত্র আনলেও মাত্র একটি বস্তা খুলতে পেরেছি, তাও সবগুলো দোকানে সাজাতে পারিনি। কারণ জায়গা নেই। আমার সাথে আরেকজনকেও দোকানের অর্ধেক জায়গা দিতে হচ্ছে। দু’জনেই একই সমস্যায় পড়েছি। তারপরও ম্যানেজ করে নিতে হচ্ছে।’

কেবল রাশিদা বেগমই নন একই সমস্যার কথা বললেন মেলায় অংশ নেওয়া জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মৃৎশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল, নকশী কাঁথা তৈরির শিল্পী হোসনে আরা, পটচিত্রশিল্পী রতন কুমার পাল, কাঠখোদাই শিল্পী বীরেন্দ্র সুত্রধরও।

লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, গত ১৮ জানুয়ারি এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। মেলা চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবার মেলায় অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত ৬৪ জন কারুশিল্পী। তবে তাদের জন্য দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩২টি। দৈর্ঘ্যে ১২ এবং প্রস্থে ১০ ফুটের একটি দোকান পেয়েছেন দুইজন কারুশিল্পী। এছাড়া উদ্যোক্তা ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে আরও ৬৮টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এই মেলায়।

রাজশাহীর পেশাদার পটচিত্রশিল্পী রতন পাল বলেন, ‘দোকানের আয়তন ছোট হওয়ায় পণ্য সাজানোর পর ভেতরে নড়াচড়ার জায়গাও পাচ্ছি না। আমরা তো নিয়মিত কাজ করা লোক। শুধু পণ্য সাজিয়ে বসলেই তো হবে না, ভেতরে কাজ করার জায়গাও তো পেতে হবে।’

দোকানের আয়তন ছোট হওয়ায় ভেতরে একটি চাকা বসানোর পর জায়গা আর সংকুলান হয় না। উপায় না পেয়ে মৃৎশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া রঙ করে শুকাতে দেন মেলার পেছনে খালি জায়গায়।

নকশীকাঁথা বানানো হোসনে আরা বলেন, ‘আমরা কয়েকজন পুরোনো শিল্পী ফাউন্ডেশনের ভেতরে কারুচত্ত্বরে স্থায়ী দোকান বরাদ্দ পেয়েছি। কারুশিল্পীদের সম্মানে আগে এই দোকানের জন্য ভাড়া নেওয়া হতো না। গত এক বছর যাবৎ প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে। দোকান থাকায় এইবার মেলাতেও অংশ নিতে পারবো না বলে বলা হইছিল। পরে আবেদন করে মেলায় দোকান পাইছি।’

কর্মরত কারুশিল্পীদের বাইরে বাণিজ্যিক কয়েকজনকেও দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিল্পী বলেন, ‘ডুপ্লিকেটদের আইনা আমাদের মতো কর্মরত শিল্পীদের বিপদে ফালাইসে। কোনটা ডুপ্লিকেট আর কোনটা আসল শিল্পী তা সবই কর্তৃপক্ষ জানে। জাইনাও সুবিধা পাইয়া তাদের জায়গা দিছে মেলায়।’

লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এবার মেলায় মোট ১০০টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩২টি দোকান দেওয়া হয়েছে কর্মরত কারুশিল্পীদের। উদ্যোক্তা ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে বাকি ৬৮টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

কারুশিল্পীদের ছোট দোকানে দু’জনকে বরাদ্দ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এইবার কারুশিল্পীদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ফলে জায়গা সংকুলানে সমস্যা হয়েছে। এই কারণে দু’জনকে একটি করে দোকান দেওয়া হয়েছে। একজনকে একটি করে দিতে গেলে যে জায়গার প্রয়োজন তা আমাদের চত্ত্বরে নেই। তেমনটা করতে গেলে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের হাঁটাচলায় সমস্যা হতো।

আরো দেখুনঃ