হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৪দিন ধরে পেয়াজ আমদানি বন্ধ বাড়ছে দাম

হিলি প্রতিনিধি।।

পেয়াজ আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ও নতুন করে অনুমোদন (আইপি) না পাওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত চার দিন ধরে পেয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। আমদানি বন্ধের ফলে আবারো বাড়তে শুরু করেছে পেয়াজের দাম এতে করে বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেয়াজ কিনতে আসা পাইকার ও সাধারন মানুষ। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন সরকার। নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত পেয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে সর্বশেষ ৩০শে এপ্রিল ৬৮টি ট্রাকে ১হাজার ৯০২টন পেয়াজ আমদানি হয়েছে। এর পরে ১লা মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত ঈদের ছুটির কারনে আমদানি রফতানি বন্ধ ছিল। ছুটি শেষে ৭ মে বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এদিকে ঈদের পুর্বে বন্দরে পেয়াজ ১৪/১৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২০ থেকে ২২টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হিলি বাজারে খুচরাতেও পেয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের পুর্বে ১৫/১৬টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২০/২৬টাকা বিক্রি হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দরে পেয়াজ কিনতে আসা মেহেদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঈদের আগে হিলির আমদানিকারকদের গুদাম থেকে পেয়াজ কিনে নিয়ে গেলাম ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে আর ঈদের পরে কিনতে এসে শুনি দাম বেড়ে গেছে। এখন দাম চাচ্ছে ২০ থেকে ২২টাকা কেজি। দাম বাড়ার কারনে পেয়াজ কেনা আমাদের তো সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা যেখানে ২০টাকা কেজি খুচরা বিক্রি করে আসলাম এখন সেখানে আমাদের এখানে ২০/২২টাকা কিনতেই হচ্ছে। কিছু পেয়াজ আরো বাড়তি দাম ২৫/২৬টাকা চাচ্ছে। এতে করে আমাদের যেমন বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে যার কারনে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

হিলি বাজারে পেয়াজ কিনতে আসা মিরাজুল ইসলাম বলেন, পুরো রমজান মাস জুড়েই পেয়াজের বাজার কমতির দিকে ছিল। তেলচালসহ অন্যাণ্য পণ্যের দাম বাড়লেও পেয়াজের দাম কম ছিল এতে করে আমাদের পেয়াজ কিনতে সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু ঈদের পরে এবার পেয়াজের বাজার বাড়তে শুরু করেছে যে পেয়াজ ঈদের আগে কিনলাম ১৫/১৬টাকা এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০/২৬টাকা। এতে করে আমাদের কিনতে অসুবিধা হচ্ছে দাম যেন সেই ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি।

হিলি বাজারের পেয়াজ বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঈদের পুর্বে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেয়াজ আমদানির ফলে বাজারে সরবরাহ ছিল যার কারনে দাম কমতির দিকে ছিল। কিন্তু আইপি শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্দর দিয়ে বর্তমানে পেয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে চাহীদা বাড়ায় পুর্বের আমদানিকৃত গুদামে মজুদরাখা পেয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যার কারনে আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে এতে করে খুচরা বাজারেও পেয়াজের দাম বাড়ছে।

হিলি স্থলবন্দরের পেয়াজ আমদানিকারক শাহরিয়ার আলম বলেন, ভারত থেকে পেয়াজ আমদানির জন্য যেসব অনুমোদন (আইপি) নেওয়া ছিল সেগুলোর মেয়াদ ছিল চলতি মাসের ৫ মে পর্যন্ত। কিন্তু পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ১লা মে থেকে ৬মে পর্যন্ত ছয়দিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ ছিল। একইভাবে দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে ওইসময়ে আমদানি রফতানি বন্ধ ছিল। যার কারনে ওই সময়ের মধ্যে বাড়তি পরিমানে পেয়াজ আমদানির ইচ্ছা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। বর্তমানে অনুমোদন দেওয়া বন্ধ থাকায় বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। পেয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সামনে যেহেতু মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা এসময়ে পেয়াজের বাড়তি চাহীদা থাকে। তাই পেয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রনে রাখতে পেয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন এতে পেয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকবে। নতুন করে পেয়াজ না আসায় পুর্বের আমদানিকৃত কিছু পেয়াজ যাদের গুদামে রয়েছে সেটি দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।

হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারি সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, গত ২৯শে মার্চ পেয়াজ আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেসময় রমজানে দেশে পেয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সময় বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত নির্ধারন করে কতৃপক্ষ। সেই মোতাবেক ৫ মে থেকে অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পেয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। যেহেতু দেশে পর্যাপ্ত পেয়াজ চাষাবাদ হয়েছে তাই সরকার চাষীদের কথা বিবেচনা করে পেয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন। সরকার বা নীতি নির্ধারক পর্যায়ে যারা রয়েছেন এবং আমাদের কোয়ারেন্টিন কতৃপক্ষ রয়েছেন উনারা যখন পেয়াজ আমদানির অনুমোদন দিবেন আমরা যখন অনলাইনে দেখতে পারবো তখন আবারো পেয়াজ আমদানি শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ শুরু হবে এটির কোন সময়সীমা বলতে পারছিনা।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত ৩০এপ্রিল পর্যন্ত ভারত থেকে পেয়াজ আমদানি অব্যাহত ছিল। এর পর থেকে বন্দর দিয়ে এখন পর্যন্ত আর কোন পেয়াজ আমদানি হয়নি। তবে আমরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি পেয়াজ আমদানির অনুমোদনের সময়সীমা ৫ মে পর্যন্ত ছিল এর পর নতুন অনুমোদন না পাওয়ায় বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি বন্ধের ফলে বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের আয় যেমন কমেছে তেমনি বন্দর কতৃপক্ষের দৈনন্দিন আয় কমেছে।

আরো দেখুনঃ