যুবলীগ কর্মীর স্ত্রীর দায়ের করা আত্মহত্যার মামলায় দুই আ.লীগ নেতার জামিন, দুইজন র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

সোনাগাজী প্রতিনিধি।।

ফেনীর সোনাগাজীতে যুবলীগ কর্মী মোখসুদ আলম বিপ্লবের স্ত্রীর দায়ের করা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় দুই আ.লীগ নেতা হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন। অপর দুইজন জামিনের জন্য ঢাকায় অবস্থান কালে সোমবার রাতেই র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। জামিন প্রাপ্তরা হলেন আ.লীগ নেতা মো. রফিক ও যুবলীগ নেতা নাজিম উদ্দিন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ছাড়াইতকান্দি হোছাইনিয়া দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি, আ.লীগ নেতা আলী মর্তুজা ও যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ করিম। তাদেরকে ঢাকার শাহবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ ও আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ দুপুরে নিজ ঘর থেকে সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী মোখসুদ আলম বিপ্লবের (৩৬) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একইদিন নিহতের মামা আবুল হাশেম বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দুই দিন পর ১০ মার্চ নিহত বিপ্লবের স্ত্রী আকলিমা আক্তার বাদী হয়ে চার আ.লীগ ও যুবলীগ নেতার নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭-৮জনকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার ধারায় সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। সোনাগাজী মডেল থানার মামলা নং-১২। মামলা দায়েরের পর আসামিরা আত্মগোপনে চলে যান। মামলার আসামিরা হলেন উপজেলা আ.লীগের সদস্য মোহাম্মদ রফিক, চরচান্দিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, আ.লীগ নেতা ও ছাড়াইতকান্দি হোছাইনিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলী মর্তুজা ও চরচান্দিয়ার যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ করিম এবং অজ্ঞাতনামা ৭-৮জন। মঙ্গলবার হাইকোর্টে হাজির হয়ে মোহাম্মদ রফিক ও নাজিম উদ্দিন জামিনের আবেদন করলে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের বেঞ্চ তাদের ছয় সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেন। ছয় সপ্তাহের মধ্য নিন্ম আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেন। আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাড. মো. জুলফিকার।

নিহত বিপ্লব সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের পশ্চিম সুজাপুর গ্রামের চুনি মাঝি বাড়ির সৌদি আরব প্রবাসী নূরুল হক খোকা মিয়ার ছেলে ও তিন পুত্র সন্তানের জনক।
৯মার্চ ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বিকালে পারিবারিক কবরাস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বিপ্লবের স্ত্রী মামলায় উল্লেখ করেন আসামিদের সাথে তার স্বামী বিপ্লবের পূর্ব বিরোধ রয়েছে। পুর্ব বিরোধের জেরে আসামিরা তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। তার স্বামী তার ব্যবহৃত ফেইসবুক লাইভে এসে এর প্রতিকারও চেয়েছিলেন। তার কাছেও সবসময় দোয়া চাইতেন। গত কয়েকদিন যাবৎ তিনি তিন সন্তান নিয়ে তার পিতার বাড়িতে ছিলেন। ৮মার্চ স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সোনাগাজী থানায় গেলে থানায় স্বামীর মরদেহ দেখতে পান। ঘটনার দিন তার শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম ঢাকার একটি হাসপাতালে ছিলেন। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান দুই আসামি গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারে প্রেরণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ আরো জানায়, মোখসুদ আলম বিপ্লবের বিরুদ্ধে সোনাগাজী থানায় চারটি ডাকাতি ও চারটি মাদক আইনের মামলা সহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো মাথায় নিয়ে সে একাধিকবার জেলও খেটেছেন। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে চরচান্দিয়া ইউনিয়নে ইয়াবা উদ্ধারের একটি ঘটনায় অন্য একজনের সাথে মোখসুদ আলম বিপ্লবকে আসামি করে মামলা রুজু এবং ঘটনায় জড়িত যুবলীগ নেতা নাজিম উদ্দিনের নাম বাদ পড়ায় বিপ্লব আ.লীগ নেতা মোহাম্মদ রফিক ও থানা পুলিশকে দায়ী করেন। তৎকালীণ সময়ে নিজের ফেইসবুকে লাইভে এসে মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে প্রতিকার চাইতেন। এছাড়াও আ.লীগ নেতা মোহাম্মদ রফিকের নাম বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতেন। সর্ব শেষ মৃত্যু্র পূর্বের দিনও ওই নেতার নাম উল্লেখ করে মিথ্যা মামলায় পূণঃজামিন নিয়েছেন মর্মে তার ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তার মৃত্যুর পর প্রায় সাত মাস পূর্বে ফেইবুক লাইভে চার নেতার বিরুদ্ধে দেয়া তার বক্তব্যটি ভাইরাল হয়।

শান্ত/অননিউজ

আরো দেখুনঃ