কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন-২০ নং ওয়ার্ড সুবিধা বঞ্চিত অপরিকল্পিত ওয়ার্ড

শান্তনু হাসান খান।।

কুমিল্লা পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয় ২০১২ সালে। নাগরিকদের সুবিধার জন্য সাবেক পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড এবং সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে মোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি কর্পোরেশন চালু রয়েছে। এখানে ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের মোট ৯ জনকে নিয়ে ৩৬জন কাউন্সিলর বিদ্যমান। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনগণ সুবিধা ভোগ করছেন। আগামী মার্চের যে কোন সময় নতুন তফসিল ঘোষণা হলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা একটু নড়েচরে বসবেন বলে অনেকে আশা করছেন। কাউন্সিলরদের সীমাবদ্ধতা আর বাজেটের কারণে অনেক উন্নয়ন সফলতার মুখ দেখেননি। তারপরেও বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যদিয়ে ২০ নং ওয়ার্ডে যথেষ্ট উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে বলে দাবী করছেন বর্তমান কাউন্সিলর ছিদ্দিকুর রহমান সুরুজ। তিনি আগামীতে আবারো কাউন্সিলর পদের প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকছেন। তার পাশাপাশি আরও ৪ জনের নাম শোনা গেছে এলাকাতে। সাবেক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, উনাইসারের গ্রাম সর্দার মমিনুল হক চৌধুরীর ছোট ছেলে- সাবেক ছাত্রলীগের নেতা এমদাদুল হক চৌধুরী বাবু, হাজী সাদেক খান এবং পরিবহন সেক্টরের ফেরদৌস মিয়া। এরা সবাই দলের সমর্থন নিয়ে নমিনেটেড হতে চাইবেন। তাদের মাঝে অন্যতম জনগণের পছন্দের প্রার্থী দুই জন। জনগণ বলছেন আনোয়ার হোসেন আর বর্তমান কাউন্সিলর ছিদ্দিকুর রহমান সুরুজ। বাকিরা মৌসুমী প্রার্থী হয়ে আসবেন বলে অনেকে মনে করেন। তবে হারুনুর রশিদও মাঠে ভোট টানবেন। তফসিল ঘোষণা হলে হাত গুটিয়ে বসে যাবার সম্ভাবনাও প্রচুর। এ ক্ষেত্রে বর্তমান কাউন্সিলর ছিদ্দিকুর রহমান সুরুজ পুরো দমে মাঠে থাকছেন নির্বাচনের শেষ অব্দি।

এদিকে বর্তমান কাউন্সিলর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার দাবী করলেও অনেক সমস্যা বিদ্যমান। ২০ ওয়ার্ডের ব্যাপক এলাকা ঘিরে সেনাবাহিনীর সংরক্ষিত এলাকা। ফলে ড্রেনেজ সিস্টেম ও ফিডার রোডগুলো সংস্কার করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকার মানুষের তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। জনগণ বলছেন, আমাদের পাশের ওয়ার্ড ২১ নম্বর। ওখানে কাউন্সিলর কাজী মাহবুব যথেস্ট উন্নয়নমূলক কাজ করে নন্দিত হয়ে আছেন। অথচ ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সে তুলনায় ১০% ও কাজ সমাধান করতে পারেননি। তারপরেও রয়েছে জন্ম নিবন্ধনের জটিলতা। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে কাউন্সিলর বলেন আমার সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমি যতটুকু করেছি তার পুরোটাই স্বচ্ছতার মধ্যে করেছি। নির্বাচনের আগে নিন্দুকেরা অনেক কথাই বলবে।

গতবারের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে আসছি। গতবারও আমি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু উনাইসারের একটি কেন্দ্রে বর্তমান কাউন্সিলর জোর করে পরিকল্পিতভাবে নীলনক্সার মধ্যদিয়ে ভোটের কারচুপি করে আমাকে ঠকানো হয়েছে। ইনশাল­াহ এবার আমি জনগণের মেন্ডেডে ওঠে আসবো।

৫৫ বছরের আনোয়ার হোসেন পড়াশোনা করেছেন নেউয়ারা। এর পরে অজিতগুহ মহাবিদ্যালয়, পরে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। সর্বশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশের ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এক সময় চৌয়ারা ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক পরে কৃষকলীগের ভূমি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন ২০ নং ওয়ার্ডটি এখনো অবহেলিত। দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন নেই। আমি নির্বাচিত হলে ইনশাল­াহ অত্যাধুনিক ভাবে ঢেলে সাজাবো এ ওয়ার্ডকে।

অন্যসব প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা হর হমেশায় হচ্ছে। অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ। তবে সংরক্ষিত মহিলা আসনে লিজা ছাড়াও আগামীতে রাজাপাড়ার নাজনিন আক্তার কাজল ও উনাইসারের নাসরিন আক্তার প্রার্থীতা চাইবেন। হাজী ছাদেক খান ব্যস্ততার জন্য কথা বলতে পারেননি। অপর প্রার্থী এমদাদুল হক বাবু ঢাকায় অবস্থান করার কারণে যোগাযোগ হয়নি। তবে এবারের নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন আর হারুনুুর রশিদ পুরোদমে মাঠে থাকবেন।

এ প্রসঙ্গে মহিলা আসনের গতবারের প্রার্থী নাজনীন সুলতানা কাজল বলেন, বিগত দিনে আমার ১৯, ২০ এবং ২১ নং ওয়ার্ডে শতভাগ বিদ্যুৎ, ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে আরো আধুনিকায়ন, সেনিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে জনগণ এখনও অনেক জায়গায় গ্রাম্য পরিবেশে বসবাস করছে। কাজল বলেন, আমি নির্বাচিত হলে আমার ১৯, ২০ এবং ২১ নং ওয়ার্ডে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত ওয়ার্ড বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাই না। এ বিষয়ে আইন -শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং এলাকার সচেতন মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি নির্বাচিত হলে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে রাজস্ব কর্মকর্তার সাথে আগামীতে বৈঠকে বসবো। কেননা বাণিজ্যিক এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স আর আবাসিক এলাকার হোল্ডিং ট্যাংক্সের যথেষ্ট বৈসম্য রয়েছে। এটা দূর করার চেষ্টা করবো। এছাড়াও আমার এলাকায় যত্রতত্র পড়ে থাকা ময়লার স্তুপ অপসারণের জন্য ভালো ডাম্পিং এর ব্যবস্থা করবো।
উচ্চ শিক্ষিত, মার্জিত এবং নন্দিত প্রার্থী নাজনীন আক্তার কাজল এবার পুরোদমে মাঠে থাকছেন। এদিকে সরেজমিনে জানা যায় ৩ জন কাউন্সিলর ১৯ এর জাকির, ২০ এর সুরুজ এবং ২১ এর মাহবুব ছাড়াও আরো কয়েকজন প্রার্থীতা চাইবেন। সবারই একটা প্রজেটিভ সাইট আছে। তবে ৩ জন মহিলার মধ্যে ঊনাইসারের নাসরিনের পূর্ব কোন নির্বাচন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা নেই। তিনি কথা বলতে অনীতা প্রকাশ করেন। এলাকার সচেতন মহিলা বলেন, সামাজিকতা রক্ষা করার জন্য কাজলের বিকল্প কোন প্রার্থী নেই।

আরো দেখুনঃ